মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দীর ধারণক্ষমতা ২৪০ জন। বর্তমানে ৬৪৯ জন বন্দী আছেন। ধারণক্ষমতার থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি এই বন্দীদের প্রাত্যহিক জীবনে আবাসনব্যবস্থাসহ নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের পাশে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার নারাঙ্গাই এলাকায় জেলা কারাগারটি অবস্থিত। কারাগারটিতে পুরুষ সেল আছে ১০টি ও ওয়ার্ড ১২টি। আর মহিলা সেল ২টি ও ওয়ার্ড দুটি। এ ছাড়া কারাগারটিতে হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ২০টি। এ কারাগারের ২৪০ বন্দীর ধারণক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে ২৩০ জন পুরুষ ও ১০ জন নারী বন্দীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
গত বুধবার (১৫ নভেম্বর) কারাগারটিতে মোট ৬৪৯ জন বন্দী ছিলেন। এর মধ্যে কয়েদি ছিলেন ২২৮ জন এবং হাজতি ছিলেন ৪২১ জন। ৬৪৯ জন বন্দীর মধ্যে সম্প্রতি দায়ের করা নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপির ৬০ জন নেতা–কর্মী রয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, কারাগারটিতে জনবল–সংকটও রয়েছে। কারাগারের হাসপাতালে একজন সহকারী সার্জন পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তা শূণ্য রয়েছে। কোনো বন্দীর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডেকে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া কারাগারের হাসপাতালে দুইজন ডিপ্লোমা নার্সের পদ থাকলেও আছেন একজন। এ ছাড়া ডেপুটি জেলারের দুইজনের মধ্যে আছেন একজন। কারাগারটিতে কারাসহকারী ও কারা–শিক্ষক পদে দীর্ঘদিন ধরে কেউ নেই। এখানে পরিচ্ছন্নকর্মীর সংকট রয়েছে।
কারাগারে থাকা কয়েকজন বন্দীর স্বজনেরা জানান, কারাগারে যে সেবা পাওয়ার কথা, অতিরিক্ত বন্দীর কারণে তা পাওয়া যাচ্ছে না। সেলে আসনসংখ্যা সীমিত থাকায় ফ্লোরে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। গোসল ও চিকিৎসাসেবা পেতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর থেকে গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৭ শতাধিক নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করা হয়েছে। এসব বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকজন বন্দীর ১৫ থেকে ২০ জন স্বজন কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ও বসে আছেন। তাঁরা বন্দীদের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যান।
গত ৬ নভেম্বর জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপির কর্মী আওলাদ হোসেনকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে কথা হয় বন্দী আওলাদ হোসেনে ফুফাতো ভাই জসিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোনো নাশকতা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর মামাতো ভাই আওলাদ জড়িত নন। এর পরও মামলায় তাঁর ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারাগারের বন্দী বেশি থাকায় বন্দীদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দ দাবি করেন, ধারণক্ষমতার প্রায় তিন গুণ বেশি বন্দী থাকলেও তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বন্দীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে।
জাহিদুল হক চন্দন/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ