৩১ দফা পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সব জুলুম–নির্যাতনের প্রতিশোধ হবে বলে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণ করা যাবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সব প্রতিশোধ নেব। আমি মনে করি, ৩১ দফার বাস্তবায়নই বড় প্রতিশোধ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। এজন্য আমাদের দায়িত্ব অন্য দলগুলোর চেয়েও বেশি।’
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ, যশোর ও নড়াইল জেলা বিএনপি আয়োজিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা স্থানীয় জোহান ড্রিম ভ্যালি মিলনায়তনে কর্মশালায় অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। ৩১ দফার মাধ্যমে দেশের মানুষের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে চাই, যেটি মানুষ প্রত্যাশা করে। এজন্য জনগণের আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের মন–মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাই আমাদের ভাবনায় শুধুই জনগণ, জনগণ ও জনগণ। শুধু তাই নয়, এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সব জুলুম–নির্যাতনের প্রতিশোধ নেব।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে ১৬ বছরে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খুন–গুম, হামলা–মামলার শিকার হয়েছেন। দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জনগণের একটি বিশাল অংশ বিশ্বাস করে—আগামীতে দেশের যদি ভালো কিছু হয়, সেটা বিএনপিকে দিয়েই হবে।’
‘শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ গঠনে নিজেই মাঠঘাটে হেঁটে হেঁটে কাজ করেছেন। আমরা শহিদ জিয়ার সেই নীতি নিয়ে কাজ করতে চাই।’
আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে হলে বিএনপির সব নেতা–কর্মীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সামনের পথ মোটেও মসৃণ নয়। পলাতক স্বৈরাচার চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট করে সব সাফ করে দিয়ে গেছে। বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, পুলিশসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ভেঙেচুরে ধ্বংস করে দিয়েছে। আগামীতে যে দল দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবে তাদের অনেক কষ্ট করতে হবে।’
‘দেশের মানুষ যদি আমাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়, এই কষ্টকে আমরা হাসিমুখে সহজ করে নিতে পারব, যদি আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি। বড় দল হিসেবে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে যেমন ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, তেমনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একসঙ্গে সংগ্রাম করা, নির্যাতন, জেল, জুলুম সহ্য করা রাজনৈতিক দলগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
৩১ দফার মাধ্যমে দেশের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কোনো জাদু বা ম্যাজিকের মাধ্যমে এই পরিবর্তন হবে না মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই পরিবর্তনের জন্য বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে প্রস্তুত হতে হবে, মন–মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’
দলীয় নেতা–কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের ভিতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কারণ, বিএনপি জনগণের দল। নিজেদের জনগণের আস্থায় নিয়ে যেতে হবে। নিজেদের শুধরাতে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘হাসিনা সরকারের প্রশ্রয়ে কিছু মানুষ ঋণের নামে ব্যাংকগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমান সরকার কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। বড় চ্যালেঞ্জ জনগণ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরাতে সরকার কাজ করবে। আমরাও এটা নিয়ে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে প্রতিটি পরিবারে একটি করে ফ্যামিলি কার্ড দেব। যে কার্ডের মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত পণ্য প্রতিটি পরিবারের মাঝে যেন পৌঁছে দিতে পারি।’
‘আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ নারী। নারীদের সুরক্ষার জন্য দলীয়ভাবে আমরা সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এর পেছনে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের স্বার্থ জড়িত ছিল। আমরা স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু।
এছাড়া ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সহ–সভাপতি মুন্সি কামাল আজাদ পান্নুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মোরশেদ হাসান খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফারজানা শারমিন পুতুল, বিএনপির সহ–তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঝিনাইদহ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।