বিজ্ঞাপন
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫

হারুন-সাদেক সিন্ডিকেটের ৬০০০ কোটি টাকার অনুসন্ধান দাবি

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

ডিবি পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদ ও এসএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক সিন্ডিকেটের ৬০০০ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে হারুন অর রশিদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত প্রায় ১০০০ কোটি টাকা ব্যবসায়ী আবু সাদেকের কাছে গচ্ছিত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া আবু সাদেকের ৫০০০ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ, হুন্ডির মাধ্যমে ও ওভার ইনভয়েস দেখিয়ে বিদেশে অর্থপাচার, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সরকারি টেন্ডারের অর্থ আত্মসাত, আমদানির ক্ষেত্রে এসএস কোড পরিবর্তন করে সরকারের অন্তত ১৫০ কোটি টাকা ভ্যাটট্যাক্স ফাঁকির বিষয়েও তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে আবু সাদেককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু মাত্র তিন দিনেই তিনি জামিনে বের হয়ে যান। ফলে গত ৮ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে তার মতো আওয়ামী লীগের দোসররা কীভাবে জামিন পাচ্ছে তা সরকারের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে বিবৃতি দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ডিবি অফিসে নিয়ে ছয় কোটি টাকা চাঁদা আদায় চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তারের তিন দিনেই জামিনে মুক্ত হয়েছেন সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের সিন্ডিকেটের প্রধান এসএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক। গণহত্যার মামলার আসামিরা কিভাবে জামিন পাচ্ছে, আমরা সরকারের কাছে সেটির স্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চাই।’

দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের পর ডিবি হারুন, পনিরুজ্জামান তরুন ও সাদিক মিলে গড়ে তোলেন ভয়াবহ সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগের দলীয় বিবেচনায় বেপজা, বিআইডাব্লিটিএ, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, টিসিবি, মডেল মসজিদ নির্মাণ, এলডিইডি, বিডাব্লিউবিডি, পিডাব্লিউডি, পদ্মাসেতু, এমআরটি প্রকল্প, সিটি করপোরেশনসহ দুইটি সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ পেতে শুরু করেন। ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে কাজ না করে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। এছাড়াও ডিবির হারুনের বিপুল পরিমাণেরন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ এই সাদেকের কাছে গচ্ছিদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। বহুমুখি এই প্রতারক হলেন এসএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক। সম্প্রতি ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ডিবি অফিসে নিয়ে ছয় কোটি টাকা আদায় চেষ্টার মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

দুদকে জমা পড়া অভিযোগে ডিবি পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদ ও এসএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক সিন্ডিকেটের ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। অভিযোগে হারুন অর রশিদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত প্রায় ১০০০ কোটি টাকা ব্যবসায়ী আবু সাদেকের কাছে গচ্ছিত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া আবু সাদেকের ৫ হাজার কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ, হুন্ডির মাধ্যমে ও ওভার ইনভয়েস দেখিয়ে বিদেশে অর্থপাচার, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সরকারি টেন্ডারের অর্থ আত্মসাত, আমদানির ক্ষেত্রে এসএস কোড পরিবর্তন করে সরকারের অন্তত ১৫০ কোটি টাকা ভ্যাটট্যাক্স ফাঁকির বিষয়েও তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করে আবু সাদেকের সাবেক ব্যবসায়ী অংশীদার ও অপহরণের শিকার ভুক্তভোগী জুলফিকার আলী মল্লিক নামের এক ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের এই সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন আবু সাদেক। হারুন ও সাদেক ছাড়াও এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন সাবেক এক অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিবি পুলিশের সাবেক ডিসি (তেজগাঁও) গোলাম সবুর, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুন, আবু সাদেকের প্রতিষ্ঠান এসএস গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান (মাহাবুব), এসএস গ্রুপের লিগ্যাল সহকারী আশিকুর রহমান রুবেল ও আবু সাদেকের সহকারী মো. শামীম।

তথ্য বলছে, হারুন অর রশিদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত প্রায় ১০০০ কোটি টাকা আবু সাদেকের ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন হয়েছে। যার বেশিরভাগ অর্থ আবু সাদেকের ব্যাংক হিসাবে, স্ত্রী হালিমা আইরিনের আলাদা প্রতিষ্ঠান খুলে সেইসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে। এছাড়া আবু সাদেকের বন্ধু ও লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ন সম্পাদক মো. আবদুর রব শামীমের জিম্মায় লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত ধরিত্রী নামক পেট্রোল পাম্পসহ প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকা ও আবু সাদেকের ভাগ্নে মো. মশিউর রহমান সোহানের প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা ও গচ্ছিত রয়েছে। এছাড়া মোহাম্মদপুরে ফুয়াদ নামে আবু সাদেকের এক ঘনিষ্ট ব্যক্তির কাছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের কয়েকটি অনিবন্ধিত ড্রাম্প ট্রাক রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আবু সাদেক নিজেও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। একইসঙ্গে ওভার ইনভয়েস দেখিয়ে বিদেশে অর্থপাচার, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সরকারি টেন্ডারের অর্থ আত্মসাত, আমদানির ক্ষেত্রে এসএস কোড পরিবর্তন করে সরকারের অন্তত ১৫০ কোটি টাকা সরকারি ভ্যাটট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন। ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভ্যাটট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আনা ১৭১টি কন্টেইনারে চালানের ১৭০ কোটি টাকার কাগজপত্র অভিযোগের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদপুরের এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে হারুন ও সাদেক বিভিন্ন সময়ে চীন, দুবাই ও মালয়েশিয়ায় অর্থপাচার করেছেন বলেও জানা গেছে।

অভিযোগের সঙ্গে হারুনসিন্ডিকেটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও লেনদেন হওয়া ব্যাংকেরও তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। তালিকায়, এসএস এন্টারপ্রাইজ, ড্রামস বিউটি পার্লার এন্ড ফিটনেস ক্লাব, ফাস্ট এসএস এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লি., এসএস হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লি, এফএসএস এনার্জি লি, রিয়েল অ্যাসেটস প্রাইভেট লি., নওশিন এন্টারপ্রাইজ ও আনিকা ট্রেডিংয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব ব্যাংকে আবু সাদেকের এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

জানা গেছে, এই সিন্ডিকেটের কালো থাবায় পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে নিস্ব হওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে রয়েছে, এদের মধ্যে আছে, মো. আনোয়ার হোসেন রিপন, মাইনুল, হুমায়ূন, তৌফিক, শহীদ, মাসুদ, সাকিব, মোছা. রুবি, মো. দুলাল, সামি, শহীদুল ইসলাম কিরণ, দেলোয়ার, জসীম, আতিক, মিজান ও সিন্দু রায়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে শহীদ নামের এক ব্যক্তিকে হারুনসাদেক সিন্ডিকেট হত্যা মামলার আসামী করে ধানমন্ডি১ এ ড্রিমস বিউটি পার্লার, একই ভবনে ৫টি ফ্ল্যাট ও তার প্রাডো গাড়ি লিখে নিয়েছিললেন বলে জানা গেছে। তবে এসব লিখে নেওয়ার পর শহীদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার ভাগ্যে কী ঘটেছে সেটিও নিশ্চিত নয়।

এছাড়াও ডিবির হারুনের যেসব সম্পত্তি আবু সাদেকের কাছে গচ্ছিত আছে বলে জানা গেছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আদাবরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৫ নম্বর রোডের ৫৫ নম্বর বাড়িতে দেড় কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান হাউজিংয়ে ১০ কোটি টাকার পাঁচটি ফ্ল্যাট, চাঁন মিয়া হাউজিংয়ে ২ কোটি টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট, বছিলা এলাকায় পাঁচটি ফ্ল্যাট, ধানমন্ডির ১ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর বাড়িতে ২০ কোটি টাকার পাঁচটি ফ্ল্যাট, মাতুয়াইলে ৬ কোটি টাকার পাঁচটি ফ্ল্যাট, তেজগাঁও এলেনবাড়ি আবাসিক এলাকায় ২৫ কোটি টাকার বাড়ি, আশুলিয়ার নিরিবিলি হাউজিংয়ে ১২ কোটি টাকার চারটি প্লট, এবং গাজীপুরে ৬ কোটি টাকার ৬৬ শতাংশ প্লটের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এদিকে ডিবি হারুন ও আবু সাদেকের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী জুলফিকার আলীকে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টার মামলা চলমান রয়েছে। মামলা নং জিআর ১৪। ২০১৩ সালে জুলফিকারকে ডিবি হারুন ও আবু সাদেকের নির্দেশে অপহরণ করেন ডিসি ডিবি গোলাম সবুরের টিম। এছাড়াও জুলফিকার আলীর ব্যবসায়ীক পাওনা ৫ কোটি ৭৩ লাখ না দিয়ে উল্টো হয়রানি করায় আবু সাদেকের বিরুদ্ধে মানি স্যুট মামলা করেছেন জুলফিকার আলী।

এসব বিষয় নিয়ে আবু সাদেক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘তার ব্যবসা বা ফ্ল্যাট লিখে নেওয়ার মতো এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’ আমদানিতে এসএস কোড পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। কেননা এসএস কোড পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তাই এসএস কোড পরিবর্তনের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির প্রশ্নই ওঠে না।’

এসব বিষয়ে জুলফিকার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি একসময় আবু সাদেকের ব্যবসায়ীক পার্টনার ছিলাম। সে কারণে তার এই অনিয়মের সব তথ্য আমি জেনে যাই। আমি তার কাছে ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা পাই। সেই টাকা না দেওয়ার জন্য সে ডিবি হারুনকে দিয়ে আমাকে গাড়িসহ তুলে নিয়ে যায়। আমার কাছে সমস্ত প্রমাণ রয়েছে। তুলে নিয়ে উল্টো ৬ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর আমি মামলা করেছি। একই সঙ্গে পাওনা টাকার জন্যেও আলাদা মামলা করেছি

ইএ / দীপ্ত

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More