ফেসবুকে প্রেম-ভালোবাসা ও অভিভাবকের অমতে বিয়ে করে যৌতুকের চাপে সংসারে বনিবনা না হওয়ায় অবশেষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ৭ পৃষ্ঠার চিরকুট লিখে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমাইয়া (১৯) নামের এক গৃহবধূ।
শনিবার (১৩ জুলাই) রাত দশটার দিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের বিশগিরি পাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
রবিবার (১৪ জুলাই) সকালে গৃহবধূ সুমাইয়ার মরদেহ ও চিরকুট উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, গত ৮ মাস আগে শেরপুর সদর উপজেলার সাপমারী এলাকার শিপন নামের এক যুবককের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেম ভালোবাসার মাধ্যমে বিয়ে হয় নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের আবু বকর সিদ্দিকের কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমাইয়ার।
এদিকে অভিভাবকের অসম্মতিতে বিয়ে হওয়ায় মেনে নিচ্ছিল না স্বামী শিপনের পরিবার। এ নিয়ে স্বামী–স্ত্রী ও পরিবাবের লোকজনদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় প্রায়ই ঝগড়াঝাটি লেগে থাকত।
এমন কী শিপন বিয়ের পর যৌতুকের ৮ লাখ টাকার জন্য সুমাইয়াকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতো। এসব বিষয় নিয়ে অভিমান করে গত রোজার ঈদের সময় সুমাইয়া তার বাবার বাড়িতে চলে এসে সেখানেই থাকছিলেন। শনিবার রাতে সুমাইয়া মনের ক্ষোভে ৭ পৃষ্ঠার চিরকুট লিখে শয়নকক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
সুমাইয়া চিরকুটে লিখেন, বিয়ের গোসল টাও পেলাম না। শেষ গোসল টাও পাব না। জানাযাও পাব না। আমার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। অনেক ভালোবাসি তোমাকে শিপন। কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে দিলা না।
তিনি আরও লিখেন, আমি চাইলে দ্বিতীয় বিয়ে করে জীবনটা ভালোভাবে চালাতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই না দ্বিতীয় কেউ আমার শরীরটা উপভোগ করুক।
বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে সুমাইয়া লিখেন, তোমরা মনে কষ্ট নিও না। শিপনকে সুখে রাখার জন্য আমি চলে যাচ্ছি। আমার মুখ তাকে দেখতে দিও না। আমার শরীরটা কাটতে দিও না। আমি তাহলে কষ্ট পাব।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভুঁইয়া জানান, নিহত সুমাইয়ার মরদেহ ও চিরকুট উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে ওসি জানান।
মঞ্জুরুল / আল / দীপ্ত সংবাদ