দিনাজপুর জেলার ১৩ টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার সাথে ভারতের ১৪৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তের শূন্য রেখায় বাংলাদেশের কয়েকশ একর জমিতে ইরি বোরো মৌসুমে ইরি ধানের চাষ হয়েছে। ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা শূন্য রেখায় চাষ করা জমিতে এখন ইরি ধান পাকতে শুরু করেছে। কিছু কিছু জায়গায় ধানকাটা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
শূন্য রেখায় আগের তুলনায় এখন ধান কাটতে বা শূন্য রেখায় যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ( বিজিবি) সকাল আটটা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করতে যেতে চাষীদেরকে সময় বেঁধে দিয়েছে। এতে করে দিনের চার ঘন্টা করে কাজ কম হওয়ার অভিযোগ করেছেন চাষিরা।
বর্তমানে ভারতীয় সীমান্ত শূন্য রেখায় বাংলাদেশী চাষীদের আবাদকৃত ধান কাটতে বা মারাই করতে যেতে ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করতে হচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্কের চরম অবনতি বা যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তেও চাষিরা আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
গত ২ মে দিনাজপুরের বিরল সীমান্তের ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মজইন বিওপি ক্যাম্প সংলগ্ন মল্লিকপুর কাঠলিয়াপাড়ার ৩২০/৯ এস পিলার সংলগ্ন শুন্য রেখায় ধান কাটা ও মারাই করা অবস্থায় ২ বাংলাদেশি কৃষিশ্রমিককে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বাংলাদেশী নাগরিকেরা প্রতিবাদস্বরূপ ও দুই ভারতীয় নাগরিককে শূন্য রেখা থেকে আটক করে বিজিবি ‘র হাতে হস্তান্তর করে। বিএসএফ ও বিজিবি‘র মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর দুই দেশের নাগরিকদেরকে ফেরত আনা হয় ও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর থেকেই সীমান্ত ঘেষা জেলার বোচাগঞ্জ, বিরল, দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর এবং হাকিমপুর সীমান্তবর্তী শূন্য রেখায় চাষাবাদকৃত চাষীদের মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে চরম ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সব সময় ভয় ও ভীতির মধ্যে থাকতে হয় সীমান্ত ঘেষা গ্রামের মানুষের। বিজিবি সীমান্তের টহল জোড়দার করেছে। পাশাপাশি সীমান্ত ঘেষা গ্রাম গুলোর বিশেষ করে শূন্য রেখায় বসবাসরত চাষীদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান ও বিজিবির সাথে নিয়মিত গ্রামবাসীরাও টহল দিচ্ছেন।
দিনাজপুর বিরলের ধর্মজইন কাঠালিয়া পাড়া জুলফিকার আলী বলেন, শূন্য রেখায় আমার জমি রয়েছে। একই জমির আইলের একপাশে ভারতের জমি এক পাশে আমার জমি। সেই জমিতে ইরি ধান রোপণ করেছি। সেই ধান পেকে গিয়েছে। ধান কাটতে গিয়ে একটু আতঙ্ক মনে হচ্ছে। কারণ সম্প্রতি সময়ে এই গ্রাম থেকেই দুজন কৃষি শ্রমিককে বিএসএফ ধরে নেওয়ার পর থেকে আমাদের মধ্যে একটু আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জুলফিকার আলীর জমিতে ধান কাটতে আসা কৃষিশ্রমিক মোবারক আলী জানান, বাংলাদেশের সীমান্তের শূন্য রেখায় যেতে বিজিবি কর্তৃক নির্দেশিত সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যেই সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা শূন্য দেখায় গিয়ে ধান কাটা মাড়াই এর কাজ করছি। তারপরও আমাদের মধ্যে একটু ভয় কাজ করছে। কখন যে কি হয়? মনের মধ্যে সবসময় ভয় নিয়ে কাজ করছি।
একই গ্রামের আবু তালেব বলেন, আমরা এই গ্রামেই মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এই শূন্য রেখায় আমরা জমি চাষ করে আসছি। কখনো এমন আতঙ্ক অনুভব করি নাই। আমাদেরকে যেকোনো সময় বিএসএফ ধরে নিয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি একটি ঘটনা এই গ্রামে ঘটে যাওয়ার কারণেই আমাদের বাড়ির মা–বোনেরা আমাদেরকে নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকে। সীমান্তে গেলে কখন যে কি হয়ে যায়।
দিনাজপুর বিরলের ধর্মজইন বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার রেজাউল করিম বলেন, সম্প্রতি সময়ে ধর্মজইন বিওপি ক্যাম্পের অন্তর্ভুক্ত কাঠালিয়া গ্রামের দুই চাষীকে বিএসএফ ধরে নেওয়ার পর থেকেই এই গ্রামের মানুষের মধ্যে একটি ভয় কাজ করছে। আমরা চাষীদেরকে সীমান্তে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। এখন যেহেতু দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় উত্তেজনা ভাব বিরাজ করছে। তাই আমরা আমাদের চাষীদের কে সকাল আটটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ শেষ করার জন্য পরামর্শ প্রদান করে আসছে।
দিনাজপুরের বিরলে ব্রি ৮৮ ধান কাটা মাড়াই উদ্বোধনে অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করতে আসা কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অবসর) বলেন, আমাদের সীমান্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। আমাদের চাষীরা শূন্য রেখায় যে ধান রোপণ করেছে। সেই ধান কেটে নিয়ে আসবে কোন অসুবিধা নেই। আমরা যেন আমাদের দেশের আইন মেনে চলি। এবং আমরা যেন আমাদের সীমান্ত রেখা ক্রস না করি।
সুলতান/আল