রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়নের একদিনের মাথায় অধ্যাপক ডা. মাহফুজুর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছে চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের ফরেনসিক প্রতিবেদন পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে অধ্যক্ষের পদায়ন বাতিল করা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে শক্ত আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন আন্দোলনকারীরা।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে সদ্য পদায়নকৃত অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে ডা. মাহমুদুল হক সরকার ও ডা. শরিফুল মণ্ডলের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে দুপুরের দিকে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন তারা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আদেশে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শাহ মো. সরওয়ার জাহানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে একই কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে।
এ নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পরেন আন্দোলনকারীরা। তাদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ মাহফুজার রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বিকৃতির অপচেষ্টাকারী স্বৈরাচারের দোসর ও সুবিধাভোগী ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষক। আওয়ামীলীগের দোসর অধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানের এই কলেজে ঠাঁই নেই বলে অধ্যক্ষের বসার রুম বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। পরে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম মন্ডল, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আদিলুর জামান, সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনাজ নাসরুল্লাহ সহ সাধারন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীরা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই সময়ের উপাধ্যক্ষ ডা. মাহফুজুর রহমান। এ ছাড়াও তিনি পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে মিলে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার ফরেনসিক প্রতিবেদন বদলানোর জন্য চিকিৎসককে চাপ দিয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতৃত্বেও ছিলেন। শুধু তাই নয় আওয়ামী ফ্যাসিস্টের সময় তিনি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এই মাহফুজুর রহমান। ছাত্র–জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কোনো শিক্ষক রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ কোনো প্রশাসনিক পদে থাকতে পারবে না বলে কঠোর হুশিয়ারী দেন তারা। সেই সাথে দাবি আাদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়কৃত অধ্যাপক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় সঠিক ফরেনসিক প্রতিবেদন দিতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৯ সাল থেকে উপাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই সময়ে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমাকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়ায় একটি চক্র নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্তের সময় নানাভাবে সহযোগিতা করার দাবি জানান তিনি।
আল / দীপ্ত সংবাদ