রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মচারীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নির্দেশনায় সচিবসহ দফতর–সংস্থার প্রধান এবং মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে কয়েকটি বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মো. মোখলস উর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনার তথ্য জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে সব সচিবদের কাছে নয় দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব স্বাক্ষরিত নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ এসেছে, অনুষ্ঠানের পেছনে কারা আছে। এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিতে প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বর্তমানে শীর্ষ পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা কম হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদেরকে সচিবালয় এবং মাঠ প্রশাসনের নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে। এরইমধ্যে কয়েকটি অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রম ঘটনায় বিব্রত হওয়ার খবর প্রকাশ পেয়েছে। এসব সমস্যা এড়িয়ে চলতেই মূলত নয় দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সংবলিত এ চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সরকারি কর্মচারীদের অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। সম্প্রতি মাঠপর্যায়ের কিছু অফিসের কর্মকাণ্ডের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা অনভিপ্রেত। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আপনার মন্ত্রণালয়/বিভাগের আওতাধীন সংযুক্ত দফতর ও মাঠপর্যায়ের অফিসসমূহের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়ে অথবা আপনার বিবেচনায় আরও কিছু বিষয় সংযোজিত করে একটি নির্দেশনা জারি করা যেতে পারে, মর্মে আমি মনে করি।
১. নিজ অধিক্ষেত্রের যেকোনো অনুষ্ঠানে যোগদানের চূড়ান্ত আমন্ত্রণ গ্রহণের পূর্বে আয়োজক প্রতিষ্ঠান/সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে নিবিড়ভাবে তথ্য সংগ্রহপূর্বক আমন্ত্রণ চূড়ান্ত করা।
২. বিতর্ক এড়ানোর লক্ষ্যে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথি সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা; কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি অনুষ্ঠানের অতিথি তালিকায় থাকলে ওই অনুষ্ঠান পরিহার করা।
৩. আয়োজিত অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র/ব্যানার/লিফলেট/পতাকা/অন্যান্য যেকোনো ছাপানো কাগজের বর্ণনা, লোগো বা স্লোগান ইত্যাদি বিষয়ে কোনো আপত্তিকর/ বিতর্ক সৃষ্টিকারী কোনো উপাদান রয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করা।
৪. অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা গ্রহণ।
৫. নিজস্ব অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র/ ব্যানার/ চিঠি/ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন/ সাজ–সজ্জা/ সার্টিফিকেট/ট্রফি–মেডেল/স্যুভেনির ইত্যাদি ভালোভাবে পরীক্ষা করা; এ সব ডকুমেন্ট অথবা স্মারকে যাতে কোনো প্রকার আপত্তিকর বা বিতর্ক সৃষ্টিকারী কোনো উপাদান বা বক্তব্য না থাকে, তা নিশ্চিত করা।
৬. সরকার কর্তৃক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে যে সব দিবস বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, সে সব দিবস যাতে পালিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা।
৭. সরকার কর্তৃক বাতিল ঘোষিত দিবসসমূহের পূর্ববর্তী বছরগুলোর সকল স্মারক/ক্রেস্ট/ছবি/ স্যুভেনির ইত্যাদি সব অফিস থেকে অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৮. আনুষ্ঠানিক প্রতিটি সভা/অনুষ্ঠানের জন্য লিখিত বক্তব্য প্রস্তুতপূর্বক পাঠ করা; লিখিত বক্তব্যের বাইরে কোনো কথা/স্লোগান/জয়ধ্বনি/বাক্য বলা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা।
৯. যে কোনো প্রকারের গুজব থেকে নিজে এবং নিজ অধিক্ষেত্রের সব সহকর্মীকে দূরে রাখা।
চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, আশা করছি– উল্লিখিত বিষয়ে আপনার আওতাধীন দফতর/সংস্থা এবং মাঠপর্যায়ের অফিসসমূহের জন্য আপনার পক্ষ হতে একটি উপানুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে নির্দেশনা জারি করা হলে, সহকর্মীগণ অধিক সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালনে যত্নবান হবেন৷ এ বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ কামনা করছি।
এসএ