একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মোহাম্মদ মজিবর রহমান মাস্টার আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় রংপুর নগরীর গুড হেলথ একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
মজিবর রহমান মাস্টার দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
তিনি ১৯৩৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার সেরাজ উদ্দিন ও মা আলিমন নেছা। ১৯৪৮ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন মজিবর রহমান। ১৯৫২ সালে দশম শ্রেণির পড়ুয়াবস্থায় বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হন ফলে সেই সময়ে তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার সময় শ্যামপুর হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১ সালে গঠিত বদরগঞ্জের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক হন। মজিবর রহমান মাস্টার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৬নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ করেন। ১ এপ্রিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের নেতৃত্বে ৩ শতাধিক আনসার, পুলিশ ও সেনা সদস্য বদরগঞ্জে আসেন। তখনও তিনি তাদের সাথে অংশ নেন। এরপর বদরগঞ্জ থেকে তারা দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে যান সেখানে তাদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
মজিবর মাস্টার ৬নং সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নোয়াজেসের সঙ্গে নীলফামারীর চিলাহাটির তিনটি স্থানে গেরিলা যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের সঙ্গে কলকাতায় দেখা করেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের নির্দেশে মজিবর রহমান ভারতের কুচবিহারের টাপুরহাট যুব ক্যাম্পে সহকারী রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। মজিবর রহমান ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বদরগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এবং কয়েক বছর বিসিআইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এক সময়ে তিনি স্কাউটস আন্দোলনে যুক্ত থেকে রাষ্ট্রপতি পদকও লাভ করেন। মজিবর রহমান মাস্টারের দুই ছেলে মোস্তাফিজার রহমান মজনু ও মোস্তাকুর রহমান শিক্ষক ও প্রকৌশলী। মেয়ে মোনসেফা খানম গৃহিণী। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন, বদরগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মলিহা খানম।
বারী/ আল/ দীপ্ত সংবাদ