শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্থার অভিযোগ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার দোয়াভাঙ্গা এলাকার ‘চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ’ এর অধ্যক্ষ তামজীদ হোসেন এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্থা ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।

কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন অধ্যক্ষ এবং তার সহযোগীদের অনিয়ম, হয়রানি, দুর্নীতি ও প্রতারণায় অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, এই কলেজটি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। বর্তমানে কলেজের নিয়মিত শিক্ষক ৩৭জন। প্রতিষ্ঠাকালে গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহযোগিতা করেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন শিক্ষক। এদের মধ্যে অনেকের শ্রম ও কষ্টের বিষয় জড়িয়ে আছে এই প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু তারা অধ্যক্ষ ও তার সহযোগিদের কাছে অনেকটা জিম্মি।

অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর গত ২৭ জুন লিখিত অভিযোগ করেন কলেজের প্রভাষক ডা. আবদুল বাসেত, নাজভীন সুলতানা, ফাতেমা বেগম, বিলকিস আক্তার, জান্নাতুল ফেরদাউস, আবুল বাশার, তাজুল ইসলাম ও নুরুল আলম। পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।

শিক্ষকরা অভিযোগে উল্লেখ করেন, একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে অধ্যক্ষ মো. তামজীদ হোসেন ও প্রভাষক এমএইচ মোহন দীর্ঘদিন কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের কুপ্রস্তাব ও যৌন হেনস্থা করে আসছেন। লোক লজ্জায় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করতে পারেনি। অনেক শিক্ষার্থী কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। সর্বশেষ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সাবিনা (ছদ্মনাম) যৌন হেনস্থার শিকার হন। শিক্ষার্থী বিষয়টি অধ্যক্ষের বাবামাকে জানান। তাদের কোন জবাব না পেয়ে কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আবদুল বাসেত ও ফাতেমা আক্তারের নিকট ঘটনা খুলে বলেন। দুই শিক্ষক ওই যৌন হেনস্থার বিস্তারিত প্রমাণ সংরক্ষণ করেন।

এছাড়া কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিসাব রক্ষক নামে থাকলেও বাস্তবে নেই। কে এই ব্যাক্তি কেউ জানেন না। ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সব ধরণের ফি আদায়ের হিসাব প্রতিষ্ঠাতা আশরাফ আলী ও অধ্যক্ষ মো. তামজীদ হোসেন এর নিকট। তারা পিতা ও পুত্র দুজনেই পরিচালনা পর্ষদ ঠিক করেন এবং কলেজের সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখেন। তাদের অনুসারি কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া অন্য কোন শিক্ষক জানতে চাইলে নানা হয়রানির শিকার হন।

অভিযোগকারী শিক্ষকরা বলেন, ২০২২২০২৩ অর্থ বছর ছাড়া বাকি সব অর্থ বছরের আয়ব্যয়ের হিসাব অধ্যক্ষ নিজের মত করে সকল অডিট পাশ করিয়ে নেন। ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত শিক্ষকদের কোন হাজিরা খাতা তৈরী হয়নি। জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ডিজিটাল হাজিরার কথা বলে এড়িয়ে যান। নোটিশ বোর্ডে ছুটির ঘোষণা দেয়া হয় না। দিলেও নিজেদের মত করে দেন।

তারা আরও বলেন, কলেজের প্রকৃত ঋণ আছে ১৬ লাখ টাকা। এই বিষয়টি শিক্ষককর্মচারীরা সকলেই জানেন। কিন্তু তারা পিতাপুত্র বলে বেড়াচ্ছেন ঋণ হচ্ছে ৫২ লাখ টাকা। বাকী টাকা কিভাবে ঋণ হলো এবং কোথায় খরচ হয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবও কেউ জানেন না।

প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও প্রভাষক আবদুল বাসেত বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন আমাদের প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদান ধার্য করা হলেও প্রতিষ্ঠাতা মো. আশরাফ আলী ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। আবার কেউ তিন লাখ টাকার অধিক দিয়েছেন। ২১ জন শিক্ষকের পুরো টাকায় দুর্নীতি করে ১২ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয় করেছেন প্রতিষ্ঠাতা নিজের নামে। ওই সম্পত্তি তিনি প্রতিষ্ঠানের নামে দান করে হয়েছেন ভূয়া ভূমি দাতা এবং প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু তিনিই কলেজের মিটিংয়ে বলতেন আপনারাও প্রত্যেকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে থাকবেন। কিন্তু তিনি সেই কথাও রাখেননি।

কলেজের প্রভাষক মো. ইয়াছিন বলেন, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মো. আশরাফ আলী অর্থাৎ অধ্যক্ষের পিতা কলেজের নিজস্ব সম্পত্তি ক্রয় করার জন্য আমাদের ২১জন শিক্ষকের কাছ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। এই টাকার হিসেবে অনেকেই সংরক্ষণ না করলেও প্রমাণ হিসেবে আমি ব্যাংকের প্রত্যেকটি রশিদ সংরক্ষণ করে রেখেছি। প্রয়োজনীয় সময়ে তা উপস্থাপন করা হবে।

যৌন হেনস্থার বিষয়ে শিক্ষক এমএইচ মোহন বলেন, আমি এই ধরণের কাজে জড়িত না। অধ্যক্ষের কাছে থাকি এবং উনার কাজগুলো করে দেয়ার কারণে এখন প্রতিপক্ষ।

অভিযোগ সম্পর্কে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফ আলী বলেন, কলেজের জন্য ৩০ শতাংশ ভূমি ক্রয় করা হয়েছে। এতে শিক্ষদেরও টাকা আছে। আমি যে ১২ শতাংশ ভূমি দান করেছি ওই টাকা আমার। বাকী ১৮ শতাংশ ক্রয় করা হয়েছে সেখানে শিক্ষকদের টাকা আছে। উনাদের টাকায় জমি ক্রয় করে আমি প্রতিষ্ঠানকে দান করিনি। যদি অভিযোগ করে থাকে তাহলে তা মিথ্যা। সবাই একসঙ্গে টাকা দেয়নি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে কলেজের প্রয়োজনে এবং সকলের সম্মতিতে টাকা খরচ করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ মো. তামজীদ হোসেন বলেন, বোর্ডের নিয়মের বাহিরে আমি কোন কাজ করিনা। শিক্ষক হাজিরা, আয় ব্যয়ের হিসাব, ছুটির নোটিশসহ যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোন টাকা আত্মসাৎ হয়নি। আয়ব্যয়ের হিসাব বাহিরের লোক দিয়ে করানো হয়েছে। যৌন হেনস্থা সম্পর্কে যে শিক্ষার্থীর কথা বলা হয়েছে ওই শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট তার বক্তব্য দিয়েছে। মূলত অভিযোগকারী শিক্ষকরা কলেজের অভ্যন্তরীন আয় থেকে বেতন চায়। আমি কিভাবে দেব। সভাপতির অনুমতি ছাড়া কোন কাজ করা যাবে না। এরপর কলেজ ভবন করার জন্য বোর্ডের চাপ আছে।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, ওই কলেজের শিক্ষকদের অভিযোগ আমি পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত করার জন্য দেয়া হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন আসলে এই বিষয়ে বলা যাবে এবং ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

/ দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More