আম স্বাদে অনন্য, বিশেষ পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। কিন্তু সবাই সমপরিমান আম খেতে পারেন না। কারণ আমে চিনির পরিমাণ বেশি। তাই এটি খেলে মানুষের শরীরের স্যুগারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
এই প্রতিবেদনে সেসব প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা।
বাংলাদেশের বাজারে ইতোমধ্যে গাছপাকা রসালো আম ওঠা শুরু হয়েছে। আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, রাজশাহী বা চুয়াডাঙ্গার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুপরিচিত নানা জাতের আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
তবে আম যে শুধুমাত্র তার স্বাদের জন্য অনন্য, তা নয়। এই ফলটি বিশেষ পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। কিন্তু পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই আছেন, যারা আম খেতে পারেন না।
কারণ আমে প্রাকৃতিকভাবেই চিনির পরিমাণ বেশি। তাই এটি খেলে মানুষের শরীরের স্যুগারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এ কারণে অনেকে বলে থাকেন, ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়া উচিৎ না। কিন্তু আম কি আসলেই ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধির কারণ? ডায়াবেটিসের রোগীরা কি কখনো আম খেতে পারবেন না? যদি পারেন, সেটি কখন?
আমের পুষ্টিগুণ
বাংলাদেশে এপ্রিল মাস থেকেই কাঁচা আম পাওয়া যায়। তবে পাকা আম আসতে শুরু করে মে মাস থেকে। জুলাই বা অগাস্ট পর্যন্ত দেশীয় আম পাওয়া যায়।
তাই, কাঁচা আমের তুলনায় আঁশযুক্ত পাকা আম শরীরের জন্য বেশি ভালো।
পাকা আমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় উপাদান পেকটিন থাকে, যা পাকস্থলিতে থাকা খাদ্যকে ভালোভাবে পরিপাক হতে সাহায্য করে।’
এছাড়া, আমের বিশেষ কিছু এনজাইম খাদ্য উপাদানের প্রোটিনকে ভালোভাবে ভেঙে ফেলতে কাজ করে। যা সামগ্রিকভাবে পরিপাক ক্রিয়ায় অবদান রাখে।
আমে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও অন্যান্য ২৫ ধরনের ক্যারোটেনয়েডস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, আমে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও চোখের চারপাশের শুষ্কভাবও দূর করে।
আমে প্রচুর বিচাক্যরটিন থাকায় এবং ভিটামিন এ ও ই থাকায় আমাদের স্কিন খুব ভালো রাখে এবং এটি খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তিও ভালো থাকে।
‘ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে আম।’
তবে পাকা আমের উপকারিতাও কম না।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের বর্ণনা অনুযায়ী, পাকা আমে যেহেতু কাঁচা আমের তুলনায় শর্করার পরিমাণ বেশি, তাই কাঁচা আম দেহের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। লিভারের সমস্যায় কাঁচা আম উপকারী। এটি বাইল এসিড নিঃসরণ বাড়ায়। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে পরিষ্কার করে। দেহে নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
দৈনিক কতটুকু আম খাওয়া উচিৎ?
একজন মানুষের দৈনিক কতটুকু আম খাওয়া উচিৎ, এটি আসলে প্রশ্নসাপেক্ষ একটি বিষয়। কারণ একজন মানুষের শারীরিক পরিস্থিতি কেমন, তার ওপর নির্ভর করবে যে ওই ব্যক্তি কতটুকু আম খেতে পারবেন, কতটুকু পারবেন না
‘একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ অনায়াসেই দৈনিক দুইটা আম খেতে পারেন।’
সেক্ষেত্রে, ফজলি আম খাওয়াটা বেশি ভালো বলে জানান তিনি। কারণ, ফজলি আমে ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ অনেক।
তবে যারা কিডনি বা ডায়াবেটিসের রোগী, আম খাওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি জানান, কিডনি রোগীদের ডাক্তার ও পুষ্টিবিদদের সাথে পরামর্শ করে আম খাওয়া উচিৎ। কারণ আমে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
এছাড়া, যুক্তরাজ্যে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯ থেকে ৬৪ বছরের পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খাদ্য তালিকায় এটি ৬০ মিলিগ্রাম।
সবমিলিয়ে, আমে থাকা নানা ধরনের পুষ্টি উপাদানের জন্য এটি ওপরে উল্লিখিত বিষয়ের বাইরেও খসখসে চামড়া, চুলপড়া, হজমের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
একাধারে অতুলনীয় স্বাদ ও একাধিক পুষ্টিগুণের কারণেই একে ফলের রাজা বলা হয়।
এখন, যেহেতু এক কাপ আমে প্রায় ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ থাকে, সেহেতু অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে একজন সুস্থ মানুষ ওই পরিমাণ আম খেতেই পারেন।
অতিরিক্ত আম খেলে মানুষ মোটা হয়?
প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ৭৯ থেকে ৮২ গ্রাম ক্যালরি পাওয়া .এছাড়া, একটি আমের ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ পানি থাকে। তবে মজার বিষয় হলো, আমে কোনো ‘কোলেস্টেরল’ থাকে না। এমনকি এতে ক্ষতিকর লবণও নেই।
তারপরও অনেকেই মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে আম খেতে চান না।
সুপ্তি/ দীপ্ত সংবাদ