শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের নামে গুলশানে সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত পার্কটি দিন দিন দখলদ্বারদের কবলে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পার্কটিকে দখলমুক্ত করে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংগঠনটির কার্যকরি সভাপতি ডা. লেলিন চৌধুরি এ দাবি জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জাতীয় নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহচর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের নামে গুলশানে সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত পরিবেশ ও জনবান্ধব একটি পার্ক রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ, সাধারণ মানুষের বিনোদন, শরীরচর্চা, বৃষ্টির পানি ধারণ ও অপসারনের কথা বিবেচনা করে উম্মুক্ত জায়গা হিসেবে এ পার্কটি রাখা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই পার্কটি মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। মানুষ এটিকে বিনোদন, শরীরচর্চা এবং নির্মল বায়ূ সেবনের একটি নান্দনিক স্থান হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এ ধরনের পার্ক সরকারের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগের অনন্য উদাহরণ।
কিন্তু গুলশান–২ এ অবস্থিত সরকারি মালিকানাধীন এ পার্ক ও মাঠে ‘গুলশান ইয়ুথ ক্লাব’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের অবকাঠামে নির্মাণ করেছে, অনেক আগেই মাঠটিকে তারের উঁচু বেড়া দিয়ে ঘিরে তারা সম্পুর্ণরূপে নিজেদের দখলে নিয়েছে। এটি আর সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত নয় বরং দখলদারেরা ক্রীড়া কোচিং ও অন্যান্য নানা কাজে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে মোটা টাকার বিনিময়ে মাঠটিকে ভাড়া দিচ্ছে। এটি একটি কমিউনিটির মাঠ হলেও গুলশান ইয়ুথ ক্লাব কর্তৃক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কারণে মাঠটি শিশু কিশোরসহ অন্যদের খেলার জন্য উম্মুক্ত নেই। পার্ক ও মাঠের সকল প্রবেশ পথে সার্বক্ষণিক পাহারাদার বসিয়ে এতে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে তারা। কমিউনিটির খেলার মাঠ এভাবে সংরক্ষিত করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রবেশকে বাধাগ্রস্ত করা তাদের দখলের সুস্পষ্ট প্রমান।
এখন শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ পার্কটির উম্মুক্ত স্থান দখল করে, তারা ফুটবলের টার্ফ বানাচ্ছে। বৃষ্টির পানি শোষণের জন্য রাখা উম্মুক্ত স্থানটি তারা ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে পার্কের ঘাসে ঢাকা সবুজ চত্ত্বর তারা ধংস করেছে এবং এই পরিবর্তনে মাধ্যমে তারা পার্কটিকে নিজেদের দখলে নিয়েছে।
ঢাকার মাঠগুলো বিভিন্ন ক্লাব এভাবে দখল করে নিচ্ছে এবং ইচ্ছামত এতে স্থাপনা তৈরিসহ নানাভাবে এর প্রকৃতি ও শ্রেণীর পরিবর্তন আনছে, ভাড়া বা ইজারা প্রদানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছে যা সুস্পষ্টভাবে আইন পরিপন্থী। গুলশানে মতো শহরের প্রাণ কেন্দ্রে এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতি নিকটে একটি ক্লাব কর্তৃক এভাবে কমিউনিটির মাঠ ও পার্ক দখল করা অতি বিস্ময়কর। কোন আইনে ক্ষমতা বলে এ প্রতিষ্ঠান এ মাঠে এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করছে তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। উম্মুক্ত মাঠে এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ মাঠ, পার্ক জলাধার রক্ষা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মাঠ ও পার্কটিতে এভাবে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অবকাঠামো তৈরি করে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সীমিত করার মাধ্যমে শুধু আইনভঙ্গ করছে না, পাশাপাশি মহামান্য আদালতের নির্দেশনা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাও লঙ্ঘন করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টির তাগিদ দিয়ে আসছেন। মহামান্য হাইকোর্ট মাঠ রক্ষায় জেলা প্রশাসকগণকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। কিন্তু ‘গুলশান ইয়ুথ ক্লাব’ মাঠ ও পার্ক দখলের মাধ্যমে আদালত ও মাননীয় প্র্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে লঙ্ঘনের দুঃসাহস দেখিয়েছে।
আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরশন, রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনকে এ মাঠ ও পার্ক রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানাই। আমরা আশা করি এ প্রতিষ্ঠানগুলো এ মাঠ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেবে এবং যে কোন অবৈধ দখলদার প্রতিষ্ঠানকে উচ্ছেদ করবে। কমিউনিটির মাঠ সকল মানুষের জন্য উম্মুক্ত থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
গুলশানের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ পার্ক ও মাঠ অতিসত্ত্বর দখলমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রেহণের জোর দাবী জানাচ্ছি।
আল / দীপ্ত সংবাদ