একজন স্বপ্নদ্রষ্টার হাতে গড়ে ওঠা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ‘আলোকিত মানুষ চাই‘ স্লোগানে তার পথচলার ৪৫ বছর পূর্তি উদযাপন করল। দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব, কেন্দ্রের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন কর্মসূচির শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রাঙ্গন।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেশবরেণ্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বর্ণিল র্যালির মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী প্রীতি সমাবেশের উদ্বোধন করা হয়।
শোভাযাত্রাটি বাংলামোটরের ময়মনসিংহ রোডের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এর সামিনে ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজসহ অন্যরা। জাতীয় ও গ্রামীণ অনুষঙ্গসহ বিভিন্ন থিমের ওপর ভিত্তি করে মোট ২৩টি অংশে বিভক্ত ছিল শোভাযাত্রাটি।
৪৫ বছর পূর্তিতে ময়মনসিংহ রোড সহ পুরো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবন সাজানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর সাজে। সড়ক ও দেয়ালে আঁকা হয়েছে আলপনা। আলোকচিত্রে এই ৪৫ বছরের যাত্রা তুলে ধরা হয়েছে একটি প্রদর্শনীতে।
অনুষ্ঠানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ১৯৭৮ সালে মাত্র ৩৫ টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেই টাকা দিয়েছিল অন্য একজন। কোন দোতলা ঘর ছিল না। সেখান থেকে আজ সমস্ত মানুষের মাঝে বই পড়া ছড়িয়েছে। এভাবে করতে করতে এখন দুই কোটি মানুষ আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তারা সবাই বই পড়ার আনন্দ উপভোগ করছে। কিন্তু এই কেন্দ্রকে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার কাজ আমাদের এখনো চলছে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ মানুষ তৈরির অগ্রসেনানী। স্বপ্ন এবং ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা তাঁর আছে। এজন্য তাঁকে অভিনন্দন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আজ দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে জাগ্রত করছে। এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ বলেন, স্যারের (আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ) সাথে শুরু থেকেই আছি। ইন্দিরা রোড থেকে শুরু করে বর্তমান নতুন ভবন সবখানেই স্যারকে সঙ্গ দিয়েছি আমরা। একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও সাহস দিয়ে স্যার দেখিয়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকেও বড় কিছু করা যায়।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ডিরেক্টর মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন বলেন, আমাদের ৪৫ বছরের পথচলায় অনেক অর্জন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আজ ৩০ লাখ পরিবারের সদস্য। মানুষের মধ্যে আলো ছড়িয়ে দেওয়ার এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। আমরা আলোকিত মানুষ গড়ার কাজটি করে যাবো। আমাদের নিজস্ব ভবন রয়েছে। লোকবল রয়েছে। তবে আমাদের ঘাটতি রয়েছে সম্পদের। এটির পরিপূর্ণতা পেলে বিশ্বসাহিত্য কার্যক্রম আরও এগিয়ে যাবে।
৪৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বিভিন্নভাবে যারা কেন্দ্রকে সহযোগিতা করেছেন তাঁদেরকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাবেক ট্রাস্টি খোন্দকার মো: আসাদুজ্জামান, ট্রাস্টি ও সাবেক সচিব আমিনুল ইসলাম, ট্রাস্টি ও সাবেক সিনিয়র সচিব মো: আবদুস সামাদ, ট্রাস্টি ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, চ্যানেল আই পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, দৈনিক প্রথম আলোর উপ–সম্পাদক আনিসুল হক, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, বিকাশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদির, আইএফআইসি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহ আলম সারওয়ার এবং দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এসএ/দীপ্ত নিউজ