আরও একবার হতে হতেও হলো না বাংলাদেশের ভারতকে হারানো। তবুও ম্যাচের পর উজ্জ্বল হয়ে থাকল তাসকিন আহমেদের গতি, হাসান মাহমুদের ঘুরে দাঁড়ানো, লিটন দাসের শিল্পীর তুলিতে আঁকা কার্যকর ইনিংস।
বুধবার অ্যাডিলেইড ওভালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ভারতের কাছে ৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রানের সংগ্রহ পায় রোহিত শর্মার দল। মাঝে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকায় ১৬ ওভারে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫১ রান। কিন্তু ১৪৫ রানের বেশি করতে পারেনি টাইগাররা।
ভারতের ছুড়ে দেওয়া ১৮৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বৃষ্টি বাধায় অনেকটা সময় বন্ধ থাকে খেলা।
এরপর খেলা শুরু হলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে রান আউট হয়ে ফেরেন লিটন দাস। পরের ওভারে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্তও।
অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাজমুল হোসেন শান্ত সিঙ্গেল পূর্ণ করলেও দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড় দিলে অপর প্রান্তে লিটনকে রানআউট করে দেন লোকেশ রাহুল। লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ২৭ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৬০ রানের দারুণ ইনিংস। এরপর মোহাম্মদ শামির বলে সূর্যকুমার যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শান্ত (২১)। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৯.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছে ৮৫ রান।
এর আগে লক্ষ্য তাড়ায় দারুণ শুরু পেয়েছে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে পাওয়ার প্লেতে এনে দিয়েছেন ৬০ রান। এরপর ঝড়ো ফিফটি হাঁকিয়েছেন লিটন দাস। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি বাধায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টি শুরুর আগে ২১ বলেই অর্ধশত পূরণ করেছিলেন লিটন।
সপ্তম ওভারের খেলা শেষে বৃষ্টি নামে। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি বাংলাদেশ এখন ১৭ রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টি থামলে ওভারের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৬-এ। বাংলাদেশের লক্ষ্য কমে দাঁড়ায় ১৫১ রানে। শেষ ৫৪ বলে ৮৫ রানের লক্ষ্যে নেমেই অবশ্য লিটনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে আজ অ্যাডিলেড ওভালে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রান করেছে ভারত।
ব্যাক অব লেন্থের হালকা বাউন্স পাওয়া বলে ইনিংসের শুরু করেছিলেন তাসকিন। প্রথম ওভারজুড়েই তিনি করেছেন দুর্দান্ত বোলিং, দিয়েছেন কেবল এক রান। এটুকু বললে কমই বলা হয় বোধ হয়। তাসকিন আদতে দুর্দান্ত ছিলেন তার পুরো স্পেলজুড়ে। ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়েছেন, উইকেট অবশ্য পাননি।
সেটা তিনি পেতে পারতেন নিজের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই। তাসকিনের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে রোহিত শর্মা সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা হাসান মাহমুদের হাতে। সোজা বাংলায় ‘লোপ্পা’ ক্যাচ ছেড়ে দেন তিনি।
পুরো ইনিংসজুড়েই ক্যাচ ছাড়ার মিছিলে নেমেছিলেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। কখনো মোস্তাফিজুর রহমান-সাকিব আল হাসান হাফ চান্স মিস করেছেন, কখনো আবার নুরুল হাসান সোহান ক্যাচ ছেড়েছেন উইকেটের পেছনে।
পরের ওভারে এসেই অবশ্য প্রায়শ্চিত্তও করে ফেলেছেন হাসান। তাকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন অধিনায়ক সাকিব। আপার কাট করতে গিয়ে ইয়াসির আলির হাতে ক্যাচ দেন রোহিত। ৮ বলে ২ রান করে ফেরেন তিনি।
এই চাপ বাংলাদেশের বোলাররা ধরে রাখেন পাওয়ার-প্লের পুরোটা জুড়ে। ৬ ওভারে কেবল ৩৭ রান তুলতে পারে ভারত। কিন্তু ওই চাপ অষ্টম ওভারে এসে সরিয়ে দেন শরিফুল ইসলাম। নো বল, ওয়াইড, ছক্কা হজমে তিনি এক ওভারেই দেন ২৪ রান। দলের সবচেয়ে খরুচে এই বোলার ৪ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য।
সাকিব অবশ্য নিজেদের প্রতি চাপ আটকে দেন লোকেশ রাহুলকে ফিরিয়ে। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাকে শর্ট ফাইন লেগের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তিনি। ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৩২ বলে ৫০ রান করেন রাহুল।
একপ্রান্তে আগলে রেখে এগিয়ে যান কোহলি। অন্যদিকে কিছুক্ষণ তাকে সঙ্গ দিয়ে দারুণ সব শট খেলছিলেন সূর্য কুমার যাদবও। মাঝে দুই দফা জীবন পাওয়ার পর সাকিবের বলেই থামেন ১৬ বলে ৩০ রান করে বোল্ড হয়ে।
শেষ অবধি ক্রিজে থাকা কোহলি ৪৪ বল খেলে করেছেন ৬৪ রান। ৮ চারের সঙ্গে হাঁকিয়েছেন এক ছক্কা।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৪ ওভারে ৪৭ রান খরচে ৩ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। আর ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট পেয়েছেন সাকিব।