ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে শনিবার (১৭ জুন) বগুড়া শহরের ভাষাসৈনিক গাজীউল হক সড়কের ‘ভাষা নীড়’ ভবনে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে রবিবার (১৮ জুন) ঢাকার ধানমন্ডিতে তার ছেলে রাহুল গাজীর বাসভবনে প্রামাণ্যচিত্র উদ্বোধন ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রে গাজীউল হকের অবদান, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, পারিবারিক ও পেশাগত জীবনসহ নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া এদিন বগুড়া পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে অধ্যক্ষ সাহাদাৎ আলম চুন্নুর সভাপতিত্বে গাজীউল হকের ওপর আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
গাজীউল হক ১৯২৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশ করে আইন পেশায় যুক্ত হন। ১৯৪৮ সালে উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পর এর বিরুদ্ধে আন্দোলন দানাবেঁধে ওঠে। এ আন্দোলনকে বেগবান করতে ৫০ সালে আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। গাজীউল হক এ কমিটির প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।
১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন গাজীউল হক। ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আমতলায় এক সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ভাষা আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার অপরাধে বেশ কয়েকবার কারাভোগ করেন তিনি।
একাত্তরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম মুহূর্তে বগুড়ায় সশস্ত্র প্রতিরোধের জন্য হাইকমান্ড গঠিত হয়। গাজীউল হক বগুড়া যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বগুড়া শত্রুমুক্ত থাকে। এরপর তিনি কোলকাতায় যান এবং সেখানে অস্থায়ী সবকারের প্রধানমন্ত্রীর তাজউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে দেখা করে বগুড়ার মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রতিবেদন দেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধের সময় বগুড়ার ট্রেজারিতে পাওয়া বিপুল অংকের টাকা ও অস্ত্র প্রবাসী সরকারের হাতে তুলে দেন।
কোলকাতায় গাজীউল হক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে ‘কথক’ হিসাবে যুক্ত হন। ‘রণাঙ্গনের চিঠি’ শিরোনামে তিনি কথিকা পাঠ করতেন। এ সময় তিনি জয় বাংলা পত্রিকায় লেখালেখির সাথে যুক্ত হন। তিনি এ সময় কোলকাতার রাস্তায় জয় বাংলা পত্রিকার হকারী করতেন।
১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বাধীন ঘাতক–দালাল নির্মূল কমিটি গণ আদালতে আয়োজন করে। তিনি ছিলেন সে আদালতের প্রধান বিচারপতি। ‘৯২ সালের মার্চ মাসে তিনি গণ আাদালতের রায় ঘোষণা করেন।
ভাষা সৈনিক গাজীউল হকের আরেকটি অবদান আদালতে বাংলায় আরগুমেন্ট প্রচলন। তিনিই সর্বপ্রথম হাইকোর্ট বিভাগ আপিল বিভাগের আদালতে বাংলায় আরগুমেন্ট প্রচলন শুরু করেন।
দেশ ও জাতির মুক্তির সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে সরকার ও প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে– একুশে পদক ও জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৮ সালে তাকে ডক্টর অব লজ প্রদান করে। ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক লিখেছেন গান, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ। ভাষা আন্দোলনের প্রথম গান, প্রভাত ফেরীর গান ‘ভুলবো না, ভুলবে না—’ তার লেখা।
গাজীউল হক ২০০৯ সালের ১৭ জুন ইন্তেকাল করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে বগুড়া শহরে সমাহিত করা হয়।
আফ/দীপ্ত নিউজ