দিনটি ছিল ১৯০৮ সালের ২৭আগস্ট। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের ছোট্ট শহর কুটামুন্ডিতে জন্ম নিল এক শিশু। নাম দেওয়া হলো ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান। কেউ তখনও জানতেন না, এই ছেলেটিই একদিন ক্রিকেটের ইতিহাসে হয়ে উঠবে কিংবদন্তি, হয়ে উঠবে ক্রিকেটের “The Don”।
ব্রেডম্যানের শৈশবের খেলনায় ছিল না ক্রিকেট ব্যাট-বল। তার ছিল এক গলফ বল আর পানির ট্যাংকের দেয়াল। বারবার বল ছুঁড়ে দিয়ে ব্যাটের মতো কাঠি দিয়ে আঘাত করতেন বলটি। এই অদ্ভুত খেলা থেকেই হাত ও চোখের অনবদ্য সমন্বয় তৈরি হয় তার মাঝে। যা পরবর্তিতে তার জন্য হয়ে দাঁড়ায় এক অপ্রতিরোধ্য অস্ত্র।
মাত্র ২২ বছর বয়সে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে ব্র্যাডম্যান যা করলেন, তা তখনকার দিনে কল্পনারও বাইরে। একাই করলেন ৯৭৪ রান। লিডসের মাঠে এক ইনিংসে ৩৩৪ রান করে তিনি শুধু রেকর্ড ভাঙলেন না, মানুষের বিশ্বাসও পাল্টে দিলেন। ক্রিকেটে এমন আধিপত্য সম্ভব!
১৯৩৬-৩৭ সালের অ্যাশেজে প্রথমে পিছিয়ে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ব্র্যাডম্যান তখন যেন নিজের হাতেই লিখলেন ম্যাচের স্ক্রিপ্ট। মেলবোর্নে খেললেন ২৭০ রানের ইনিংস, আর সেই ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়ে জন্ম নিল সিরিজ জয়ের গল্প। এটা তাকে শুধু ব্যাটসম্যান নয়, নেতা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া দলে।
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো তার ব্যাটিং গড় ছিল ৯৯.৯৪। ক্রিকেটের শতবর্ষী ইতিহাসে এমন পরিসংখ্যান আর কেউ ছুঁতে পারেননি। শেষ টেস্টে মাত্র চার রান দরকার ছিল সেই গড়টিকে পূর্ণ ১০০-তে তুলতে। কিন্তু ভাগ্য যেন তাকে রূপকথার শেষটুকু অপূর্ণ রেখেই অমর করে দিল।
ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার পর ব্র্যাডম্যান আলোচনার মঞ্চ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যান। স্ত্রী জেসির মৃত্যুর পর আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তিনি। এক চিঠিতে লিখেছিলেন “বিখ্যাত হওয়া এক ধরনের সম্মান বটে, তবে জীবনে এখন শুধু নির্জনতা আর স্মৃতি।”
আজও তার জন্মদিনে ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকে স্মরণ করে শুধু একজন খেলোয়াড় হিসেবে নয়, এক অনুপ্রেরণা হিসেবে। কারণ ব্র্যাডম্যান প্রমাণ করেছিলেন, একটি ব্যাট আর এক অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়েও ইতিহাস লেখা যায়।