বিজ্ঞাপন
শুক্রবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
শুক্রবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৫

মুমিনের জুমাবারের কিছু আমল ও শিশুদের নামাজ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ একটি। মুসলিমদের প্রাত্যহিক জীবনে নামাজের প্রভাব অভাবনীয়। ইবাদত মু’মিনের হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে।

প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি মুসলিম নারীপুরুষের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ফরয করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে নামাজের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, সালাত আদায় কর ( কায়েম কর বা সংযোগ প্রতিষ্ঠা কর ) এবং যাকাত আদায় কর ও যারা রুকুকারী (অবনত হওয়া) তাদের সাথে রুকু কর । (সুরা বাকারা, আয়াত৪৩)

জুমার নামাজ দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজ থেকে একটু ভিন্ন। কারণ এই নামাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যাদের ওপর হজ্জ ফরয হয়নি তাদের জন্য জুমার দিনের ইবাদতকে হজ্জের সওয়াবের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। হজ্জ মূলত আর্থিক ও শারিরীক শ্রম এবং কিছু বিশেষ আচার ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে উত্তমরূপে অজু করে ফরজ নামাজের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে ইহরাম বেঁধে হজে গমনকারীর মতো সওয়াব লাভ করে। আর যে ব্যক্তি শুধু সালাতুদ্দুহা (পূর্বাহ্নের নামাজ) আদায়ের উদ্দেশ্যে কষ্ট করে বের হয়, সে ওমরাহ আদায়কারীর মতো সওয়াব লাভ করবে। ’ (আবু দাউদ৫৫৮)

নামাজ যেহেতু প্রত্যেক সাবালক নারী ও পুরুষের জন্য ফরয, সেহেতু শরিয়াহসম্মত কোনো ওযর ব্যতীত কোনো অবস্থাতেই নামাজ ত্যাগ করার সুযোগ নেই। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জুমু‘আর দিনে প্রত্যেক সাবালকের জন্য গোসল করা ওয়াজিব।(বুখারী৮৭৯)

শুক্রবার বা জুমা বারের দিনে মুসলিমদের সালাত আদায় করার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে তাহারাত বা গোসল করা, ভালো পোশাক পরিধান, মেসওয়াক করা, রেশমি কাপড় না পড়া, সুগন্ধি ব্যবহার নিয়ে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন সাহাবিরা। এছাড়া এদিন মসজিদে মুসল্লিদের আগে যাওয়ার গুরুত্ব নিয়েও অনেক হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ্র রসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন জানাবাত (ফরয) গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কোরবানি করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী সদাকা করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম সদাকা করল। পরে ইমাম যখন খুতবা দেওয়ার জন্য বের হন, তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) যিকির শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে।(সহীহ বুখারী৮৮১)

পুরুষদের জন্য রেশনি পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করেছেন রাসূল (সা.)। অন্যদিকে জুমার দিনে উত্তম পোশাক পড়তে উৎসাহিত করেছেন। আমরা মুসলিমদের অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভালো পোশাক পরিধান করি বা প্রস্তুতি রাখি। অথচ, আমাদের মনে রাখা দরকার যে—সকল মনিবের মহামনিব মহান আল্লাহ, ইবাদতের মাধ্যমে তার সামনে নত হওয়ার বা হাজির হওয়ার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ ভালো পোশাক পরিধান করা উচিৎ। কারণ তিনিই তো সর্বাধিক সম্মানিত। তার সামনেই তো উত্তমরূপে হাজির হওয়া দরকার।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, উমর ইব্নু খাত্তাব (রা.) মসজিদে নববীর দরজার নিকটে এক জোড়া রেশমী পোশাক (বিক্রি হতে) দেখে নবীকে (সা.) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! যদি এটি আপনি খরিদ করতেন আর জুমার দিন এবং যখন আপনার নিকট প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরিধান করতেন। তখন আল্লাহ রসূল (সা.) বললেন, এটা তো সে ব্যক্তিই পরিধান করে— আখিরাতে যার (কল্যাণের) কোনো অংশ নেই। অতঃপর আল্লাহর রাসূলের (সা.) নিকট এ ধরনের কয়েক জোড়া পোশাক আসে, তখন তার এক জোড়া তিনি ‘উমরকে (রা.) দেন। ‘উমর (রা.) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল(সা.)! আপনি আমাকে এটি পরতে দিলেন, অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোশাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাকে এটি নিজের পরিধানের জন্য দেইনি। ‘উমর ইবনু খাত্তাব (রা.) তখন এটি মক্কায় তার এক ভাইকে দিয়ে দেন। যাকে পোশাকটি দেওয়া হয় তখন তিনি মুশরিক ছিলেন। (বুখারী ৮৮৬)

মুসলিম পরিবারের শিশুদের ইসলামী জীবনাচার শেখানোর জন্য পিতামাতার ভূমিকাই প্রধান। শিশুরা বাবামায়ের কাছেই প্রথম আচরণ ও শিক্ষা রপ্ত করে থাকে। বাস্তবিক অর্থে শিশুরা মূলত অনুকরণপ্রিয়। তাই তাদের সামনে যেসব আচারঅনুষ্ঠান বেশি হয় তাতে তাদের সম্পৃক্ততা থাকে, শিশুদের মন ও মানস সেভাবেই গড়ে ওঠে।

কোরআন ও হাদীসের নির্দেশনা অনুসারে মুসলিম পরিবারের সন্তানদের নামাজ শেখানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এজন্য তাদের অনুকূল পরিবেশ দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই অনুকূল পরিবেশ আধুনিক সমাজের পরিবারগুলোতে সচরাচর পাওয়া কঠিন। এজন্য জুমাবারসহ প্রতি ওয়াক্তে শিশুদের মসজিদে নিয়ে গেলে সেই পরিবেশে আকৃষ্ট হতে পারে তারা।

আমর ইবনু শুআয়েব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের বয়স ৭ বছর হলে তাদেরকে সলাতের জন্য নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স ১০ বছর হয়ে যাবে তখন (সালাত আদায় না করলে) এজন্য তাদেরকে শারিরীক শাস্তি দেবে এবং তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করে দেবে (আবু দাউদ৪৯৫)

আমাদের অবিভাবকদের অনেকেই মসজিদে শিশুদের বিচরণে বিরক্তিবোধ করেন, যা মোটেও ঠিক নয়। কারণ শিশুরা নিষ্পাপ। তারা বড়দের অনুকরণ করে শিখবে। সামাজিক শৃঙ্খলা ও আচরণও শিশুরা বিভিন্ন বয়সী মানুষের সাহচর্যে শেখার একটি সুযোগ পেতে পারে মসজিদে যাতায়াতের মাধ্যমে। আল্লাহর রাসূল (সা.) যখন সালাত আদায় করতেন, তখন হাসান ও হোসেন (রা.) তার ঘাড়ে ও পিঠে উঠতেন। তাতে তিনি বাধা দিতেন না। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলের (সা.) সুন্নাহসমূহ অনুসরণ করা উচিৎ।

আল

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More