ঠাকুরগাঁওয়ের মিলন অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। মিলনকে হত্যা করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ছিলো পূর্বপরিকল্পিত বলে জানিয়েছে ঠাকুরগাও ডিবি পুলিশ।
রবিবার (২৩ মার্চ) দীপ্ত নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নবিউল ইসলাম।
নবিউল ইসলাম জানান, প্রথমে জানাগেছে অপহরণের তিনদিন পর মিলনকে হত্যা করে ঘাতক চক্রটি। তবে রিমান্ডে উঠে আসে ঘটনার মূল রহস্য। মিলনকে অপহরণ করে হত্যা করা ও লাশ গুম করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাটি ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত। অপহরণের প্রায় ৬ মাস আগে থেকে মিলন ও তার পরিবারকে নিয়মিত অনুসরণ করেছিল ঘাতক সেজান। ঘটনার আগে হত্যার জন্যে কসটেপ ও মাফলার কেনা ছিলো, লাশ নিয়ে যাওয়ার রুট ও বিকল্প রুটসহ লাশ গুম করার পরিকল্পনা তাদের সাজানোই ছিলো।
মামলার লোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, মিলনকে অপহরণের সাথে সাথেই হত্যা করা হয়। মাফলারের সাহায্যে ২ থেকে ৩ মিনিটেই শ্বাস রোধ করে মিলনকে হত্যা করে সেজান ও মুরাদ। শুধু তাই নয়, হত্যার পরে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরেছে তারা। তবে এ ঘটনায় প্রথমে ৩ লাখের টার্গেট থাকলেও পরে ৩০ লাখ নেয়ার পরিকল্পনা করে চক্রটি। একটা পর্যায়ে গিয়ে মিলনের পরিবারের সাথে ২৫ লাখ বিনিময়ে সম্মত হয়।
জানা গেছে, সাধারণত কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাই সেজানের অপহরণকারী চক্রের মূল টার্গেটে থাকতো। এসকল উঠতি বয়সী ছেলেদের ফেসবুকে প্রেমের ফাদে ফেলে ডেকে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ ও অপহরণ করে মুক্তিপণের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিতো চক্রটি। প্রথমে শুধুমাত্র সমকামী যুবকদের জন্যে ফেসবুকে প্রেমের ফাদ পেতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে ছিনতাই ও স্বল্প পরিমাণ অর্থ মুক্তিপণ নিতো সেজান ও মুরাদ। একটা সময় তারা ফেসবুক প্রেমের ফাদের চক্রে নারীদের মাধ্যমেও উঠতি বয়সী যুবকদের আকৃষ্ট করতে থাকে। এভাবেই আস্তে আস্তে এই অপরাধ জগতে জড়িয়ে পরে সেজানরা। শুরুর দিকে প্রতিটি অপহরণের ঘটনায় এক–দুই হাজার উপার্জন হলেও, আস্তে আস্তে তারা লাখটাকা লেনদেনে অভ্যস্ত হতে থাকে।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, মিলনকে অপহরণের ঘটনায় পাওয়া মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকাই সেজানের অপরাধ জীবনের সবচাইতে বড় দাইন ছিলো। এর আগে ছোটো বড় প্রায় ১০/১২ টি অপহরণ ধর্ষণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এই সেজান। এসকল ঘটনায় সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মুক্তিপণ হাতিয়ে নিয়েছে সেজানরা। তবে এর আগে কখনওই ২৫ লাখের মত এতবড় পরিমাণ মুক্তিপণের অর্থ পায়নি বা দাবিও করেনি এই অপহরণকারী সেজান। এর আগে কখনো অপহরণ করতে গিয়ে কোনো হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটাতে হয়নি।
ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশের সূত্রে জানাগেছে, মিলনকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি যুক্ত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েেছেন ঘটনার প্রধান আসামি ঠাকুরগাঁও মহেশপুর বিটবাজার এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে সেজান আলী(২৩) ও আরাজি পাইক পাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ(২৫)। সেইসাথে ফেসবুকে প্রেমের ফাদে সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সালন্দর ইউনিয়নের শাহীনগর তেলিপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে ও আসামি মুরাদের ভাগ্নি রত্না আক্তার রিভা (১৯)। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় সহায়তা করার অপরাধে আকচা এলাকার ইলিয়াসের ছেলে মনিরুল(১৭)। আলামত গুম করতে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছে সেজান আলীর মা শিউলি বেগম।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন,’ মিলন হত্যাকান্ডের ঘটনায় আমারা এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। সেইসাথে ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের বাকি টাকা উদ্ধার কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।
আল/হিমেল