মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে ডাক বিভাগের সাবেক ও বর্তমান আটজন মহাপরিচালক (ডিজি), নগদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (সিইও) ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সরকার মোহাম্মদ আমির খসরু বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালকদের মধ্যে সুশান্ত কুমার মন্ডল, সুধাংশু শেখর ভদ্র, বাহিজা আক্তার, সিরাজ উদ্দিন, ফয়জুল আজিম, হারুনুর রশীদ, তরুন কান্তি সিকদার ও বর্তমান ডিজি এস এম শাহাব উদ্দিন এবং নগদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানভীর আহমেদ মিশুককে বিবাদী করা হয়েছে।
অন্য অভিযুক্তরা হলেন– নগদের সাবেক পরিচালক শাফায়েত আলম, মারুফুল ইসলাম ঝলক, আমিনুল হক, নিয়াজ মোরশেদ, ফয়সাল আহসান চৌধুরী, এম তামজিদ রহমান, সৈয়দ আরশাদ রেজা, মিজানুর রহমান, রাহেল আহমেদ ও বর্তমান পরিচালক রেজাউল হোসেন এবং নগদের কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম, আবু রায়হান ও আশীস চক্রবর্তী রয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগে বলা হয়েছে, নগদ লিমিটেড ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি টাকার ইলেকট্রনিক মানি তৈরি করেছে। এটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০২০ সালে পোস্টাল ক্যাশ সেবা নগদ লিমিটেডে রূপান্তরিত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছিল। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে বড় পরিসরে আর্থিক জালিয়াতি করা হয়েছে, যা দুই হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাবের গরমিল তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, নগদে মোট ২,৩০০ কোটি টাকার অনিয়ম শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৬০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ই–মানি তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রা তৈরি দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক এবং এটি মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে পারে।‘
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। ২১ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদের প্রশাসক হিসেবে মোহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেয়। একইসঙ্গে ছয়জন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাকে সহায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর ফলে নগদের আগের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল হয় এবং তানভীর আহমেদ মিশুক তার এমডি ও সিইও পদ হারান। ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্স স্থগিত করে।
মামলার বিষয়ে নগদের সাবেক সিইও তানভীর আহমেদ মিশুক এক লিখিত বিবৃতিতে দাবি করেন, ‘মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, ৬৪৫ কোটি টাকার ই–মানি ঘাটতি রয়েছে, অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নভেম্বর মাসের এক চিঠিতে ই–মানির ঘাটতি ৪৮.৬০ কোটি টাকা বলা হয়েছিল।‘
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত প্রশাসনিক দল নগদ নিয়ন্ত্রণে নেয়। তাহলে এই ঘাটতি কার সৃষ্টি? যদি এটি নতুন প্রশাসনের কারণে হয়ে থাকে, তবে দায়ও তাদের নিতে হবে।‘
এ বিষয়ে তারা শিগগিরই আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান তানভীর আহমেদ মিশুক।
বর্তমানে নগদের কার্যক্রম সরকার পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ভবিষ্যতে নগদকে আরও স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। নগদের ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থনীতিবিদ কেএএস মুরশিদের নেতৃত্বে একটি পরিচালনা বোর্ড গঠন করা হয়।
সূত্র: প্রথম আলো ও দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড