গত ২৯ অক্টোবর থেকে ২৩ নভেম্বর এই ২৫ দিনে সারাদেশে তিনদিন হরতাল ও ১৫ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও তার কিছু শরীক দল। ১৮ দিনের হরতাল–অবরোধে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন মানিকগঞ্জের বাস মালিক, চালক ও সহযোগীসহ যাত্রীরা। বাস চলাচল না করায় বেশি টাকা খরচ করে মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে রবিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে মানিকগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ঘুরে বাস মালিক, চালক ও সহযোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের আরিচা, পাটুরিয়া, ঘিওর ও দৌলতপুর রুট থেকে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকার নবীনগর, সাভার, গাবতলী, গুলিস্তান রুটে প্রতিদিন প্রায় তিন শতাধিক বাস চলাচল করে।
প্রতিদিন একেকটি বাস গড়ে দুইটি করে ট্রিপ দিলে তাদের আয় হয় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। এতে করে প্রতিদিন এই সেক্টরে বানিজ্য হয় ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকার মত। এই হরতাল–অবরোধে প্রায় ৮০ শতাংশ বাস বন্ধ থাকে। বাকি যে বাসগুলো রয়েছে ক্ষয়ক্ষতির ভয়ে তারা সংক্ষিপ্ত দূরুত্বে চলাচল করে। ১৮ দিনের হরতাল–অবরোধে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সোয়া দুই কোটি টাকার আর্থিক লোকসানের শিকার হয়েছেন বলে বাস মালিক, চালক ও সহযোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
শুভযাত্রা পরিবহনের বাস চালক মো. রুস্তম মিয়া দীপ্ত নিউজকে জানান, হরতাল–অবরোধের জন্য ১৮ দিন গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছি। আমার গাড়ির স্টিয়ারিং না চালালে পেটের ভাত যোগাড় করা কষ্ট হয়ে যায়। বাসায় বউ ও ছোট মেয়ে আছে তাদের খরচ আমার খরচ আছে। আয় নাই তাই বলে খরচ বন্ধ হয় নাই। ধারকর্য করে চলতে হচ্ছে, এভাবে আর কতদিন পারবো জানিনা। প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গায় গাড়িতে আগুনসহ ভাঙা হচ্ছে এমন খবরে বাসের মালিক রাস্তায় গাড়ি বের করতে দেন না।’
বাস চালক মো: জাহাঙ্গীর মিয়া প্রতিবেদককে জানান, ‘প্রতিদিন মানিকগঞ্জ থেকে গুলিস্তান, আরিচা বা পাটুরিয়া থেকে গাবতলী রুটে দুইটা ট্রিপ দেওয়া যায়। তাতে আমাদের গড়ে ৬ বা ৭ হাজার টাকা আয় হয়। ১৮ দিনে প্রায় এক লাখ দশ থেকে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকার মত হতো। কিন্তু এর মধ্যে কয়েকদিন গাড়ি বের হয়েছে খুব বেশি আয় করতে পারি নাই। মালিক মানা করার কারণ, কয়েকদিন আগে মানিকগঞ্জে একটা বাস পুড়িয়ে দেয় দুবৃত্তরা। সে পোড়া বাস এখনো ঠিক করা সম্ভব হয়নি।’
বাস চালক আসমত হোসেনের সাথে কথা হলে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কি পরিমান লোকসান হয়েছে তার এই সেক্টরে। তিনি বলেন, ‘হিসেব করেন প্রতিদিন ৩০০ বাস যদি গড়ে দুইটা ট্রিপ দেয় তাহলে আমাদের ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন আয় ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা। আর ১৮ দিনে প্রায় তিন কোটি টাকার মতো হবে। এর মধ্যে ২০ ভাগ গাড়ি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছে। তারাওতো এই কয়েকদিন আয় করেছে। সে হিসেবে ধরেন ৮০ ভাগ গাড়ি বন্ধ থাকায় সোয়া দুই কোটি টাকার কমবেশি লোকসান হয়েছে।’
শুভযাত্রা বাসের মালিক দুলাল হোসেনও একই সুরে বলেন, ‘একেকটি গাড়ির দাম ১০ থেকে ১৫ লাখ ক্ষেত্র বিশেষে আরো বেশিও আছে। একটা দুর্ঘটনা যদি ঘটে যায় তাহলে আমরা পথে বসে যাবো। অনেকে লোন করে গাড়ি নামিয়েছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও আমরা বন্ধ করে রাখতে বাধ্য। কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে আসার পথে ধামরাইয়ের শ্রীরামপুরে মানিকগঞ্জের তিনটি বাসের জানালা ও পেছনের কাঁচ ভেঙে দিয়েছে হরতালকারীরা। তাহলে যে কয় টাকা আয় ওইদিন ওই বাস চালক করেছেন তার সব টাকাই সেগুলো মেরামত করতে চলে যাবে।’
বাসের সহযোগী মুক্তার জানান, ‘বাস চলাচল করলে প্রতিদিন ৩০০ টাকা পাই। বাস চালানো বন্ধ তাই রোজগার ও বন্ধ। চলতে খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যদি দুই একদিন হতো তাহলে সেটা মানিয়ে নেওয়া যেত। এই মাসের সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে চার দিনেই হরতাল–অবরোধ আছেই। সব কষ্ট আমাগো গরীব মানুষের।’
মানিকগঞ্জ বাস, মিনিবাস ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান, ‘বিএনপি–জামায়াত জোটের হরতাল–অবরোধে মানিকগঞ্জের বাস মালিক, চালক ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কারণ এই সেক্টরের প্রায় সবাই গাড়ির আয়ের উপর নির্ভরশীল। শুধু মানিকগঞ্জ না সারাদেশেই এমন অবস্থা। তাই হরতাল–অবরোধ না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।’
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ