নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা ৭৩টি কচ্ছপসহ একজনকে আটক করেছে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। বুধবার (২১ মে) সকালে উপজেলার জমিদারহাট এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক ও আব্দুল্লাহ আস সাদিক। তারা জানান, অভিযানের সময় ২৫টি কড়ি কাইট্যা, ৪২টি সুন্ধি কাছিম এবং ৬টি হলুদ কাইট্যা—এই তিন প্রজাতির মোট ৭৩টি কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত কচ্ছপগুলোর সম্মিলিত ওজন প্রায় ৮০ কেজি।
অভিযানকালে এক পাচারকারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি নোয়াখালীর বিভিন্ন জলাশয় থেকে কচ্ছপ সংগ্রহ করে মজুদ করতেন এবং পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের জন্য প্রস্তুত করতেন। উদ্ধারকৃত কচ্ছপগুলোকেও পাচারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আস সাদিক জানান, ‘উদ্ধারকৃত কচ্ছপগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর দ্রুতই এগুলোকে তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থলে অবমুক্ত করা হবে।‘
তিনি আরও বলেন, ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আমরা সর্বদা তৎপর। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।‘
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা ও তরুণ গবেষক জোহরা মিলা বলেন, ‘দুই–তিন দশক আগেও দেশের জলাশয়গুলোতে প্রচুর কচ্ছপ দেখা যেত। কিন্তু এখন অবৈধ শিকার, বাসস্থান ধ্বংস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কচ্ছপ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।‘
তিনি জানান, দেশে কচ্ছপের যেসব প্রজাতি রয়েছে, তার সবই কমবেশি হুমকির মুখে। প্রাণীটি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী সংরক্ষিত। এই আইন অনুযায়ী কচ্ছপ শিকার, হত্যা বা পাচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনটির ৬ ও ৩৪(খ) ধারায় এ অপরাধের জন্য কঠোর সাজা নির্ধারিত রয়েছে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কচ্ছপের চাহিদা এবং দাম বেশি হওয়ায় এটি পাচারকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তবে এই প্রবণতা রোধ না করা গেলে বাংলাদেশের জলজ প্রতিবেশ ব্যবস্থা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
পরিবেশ সংশ্লিষ্টদের দাবি, শুধু কচ্ছপ নয়, দেশের অন্যান্য বিপন্ন বন্যপ্রাণীও একই ধরনের হুমকির মুখে রয়েছে। বন্যপ্রাণী পাচার রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কঠোর নজরদারি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।