ফেনীর সেন্ট্রাল হাই স্কুলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী বাবু সন্তোষ লাল ৩৫ বছরের কর্মজীবন শেষে রাজকীয়ভাবে বিদায় নিলেন। গত রবিবার (২২ জুন) সন্তোষ লালের বিদায় উপলক্ষে স্কুল অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয় বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি আলাল উদ্দিন আলাল। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সহকর্মীসহ সবার ভালোবাসায় সিক্ত ‘সন্তোষ’ বিদায় নেন সুসজ্জিত গাড়িতে। বিদায়ের দিনটি যেন হয়ে উঠেছিল এক মিলনমেলা। গলায় ফুলের মালা, হাতে উপহারের ব্যাগ, আর মন ভরা স্মৃতি নিয়ে বাবু সন্তোষ লালের শেষ পথচলাকে করে তোলা হয় স্মরণীয়।
বিদায় বেলায় সম্মাননা ক্রেস্ট, নগদ টাকা, আসবাবপত্রসহ নানা উপহার সামগ্রী পেয়ে আবেগে আপ্লুত সন্তোষ লাল চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়, গলায় মালা পরিয়ে সুসজ্জিত গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয় তাকে।
স্কুল সূত্রে জানা গেছে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক, প্রভাতী ও দিবা শাখার শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উপহার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও দিবা শাখার শিক্ষক পর্ষদের পক্ষ থেকে ৫৪ হাজার টাকা, প্রভাতী শাখার পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা, দিবা শাখার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৬০ হাজার ৫৭০ টাকা, প্রভাতী শাখার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৫৯ হাজার ১৩০ টাকা এবং সাবেক সেন্ট্রালিয়ানদের পক্ষ থেকে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫০ টাকা সন্তোষ লালকে উপহার দেয়া হয়েছে।
বাবু সন্তোষ লাল বলেন, আমার মত এমন একজন মানুষকে এভাবে সবাই বিদায় দিবে আমি কখনও ভাবিনি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, দীর্ঘদিন এ স্কুলে ছিলাম অনেক স্মৃতি রয়েছে। আমি অনেক আনন্দিত পাশাপাশি স্কুল ছেড়ে যাওয়ায় দুঃখ লাগছে। সেগুলো আঁকড়ে ধরে বাকি জীবন কাটিয়ে দেব।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, শুধু কর্মজীবন নয়, সন্তোষ লাল যেন নিজেই এই বিদ্যালয়ের ইতিহাসের একটি অংশ। ১৯৭৩ সালে মা সুন্দরী রানীর হাত ধরে মাত্র ৯–১০ বছর বয়সে এসেছিলেন স্কুলে। পরে বাবা কানু লালও যোগ দেন একই পেশায়। সেই উত্তরাধিকার ধরে সন্তোষ বাবুর স্ত্রী সনজু রানী দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে স্কুলের পরিষ্কার– পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তিন মেয়ের জনক সন্তোষ লাল বর্তমানে সুলতানপুরে বসবাস করছেন। হার্ট, ডায়াবেটিস ও পায়ে সংক্রমণের কারণে আর কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না তার পক্ষে। তাই চাকরির শর্ত অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিলেন তিনি।
বিদায় অনুষ্ঠানে স্কুলের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন এ আয়োজনে। পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে সন্তোষ লালকে উপহার দেয়া হয়েছে।