পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভোটার তালিকা করে যেনতেন নির্বাচন আয়োজনের পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে পাবনার সদর উপজেলার আলোচিত বিদ্যালয় দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।
এর প্রতিবাদে টিআর (শিক্ষক প্রতিনিধি) পদে মনোনয়ন না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষকরা। এছাড়াও নানা কারণে শিক্ষা অধিদফতের চিঠিতে সমালোচিত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বেতন–ভাতা বন্ধ হওয়ায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এবিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকরা।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ০৮মে বিদ্যালয়ের এডহক কামিটি অনুমোদিত হয়। নীতিমালা অনুযায়ী এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৮০ দিন পূর্বেই ভোটার তালিকা করতে হয়। যা গত ১৮ আগস্ট ভাটার তালিকা প্রণয়নের সময় শেষ গেছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন কলা কৌশল ও স্বেচ্ছারিতার মাধ্যমে গত ২৭ আগস্ট ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা প্রকাশ করেন। পরে ৩০ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত মিটিংয়ের আয়োজন করেন, যা নীতিমালা অনুযায়ী আয়োজনের কথা ছিল অন্তত একমাস পূর্বেই ৷ এজন্য টিআর (শিক্ষক প্রতিনিধি) মিটিং অংশগ্রহণ করেন নাই । আবার তালিকায় বেশ কিছু শিক্ষার্থীর ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে যাতে তাদের অভিভাবকরা ভোটে অংশগ্রহণ করতে না পারেন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচনে তার পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে নানা ষড়যন্ত্র ও পাঁয়তারা করছেন প্রধান শিক্ষক। এবিষয়ে অভিযোগ দেয়া হলেও তদন্ত না করেই নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে। ফলে নির্বাচনে টিআর (শিক্ষক প্রতিনিধি) পদের জন্য মনোনয়ন না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সকল শিক্ষকরা।
এদিকে নানা কারণে শিক্ষা অধিদফতরের চিঠিতে সমালোচিত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বেতন–ভাতা বন্ধ হওয়ায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষকরা। তাদের দাবি– প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সিনিয়র শিক্ষক লাঞ্ছনা, বিদ্যালয়ের আঙিনায় গোহাইল ঘর নির্মাণ, স্কুলের মার্কেটের ৮–১০ টি দোকান বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম–দুর্নীতির চিত্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব কারণে শিক্ষকদের অভিযোগের প্রক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রধান শিক্ষকের বেতন–ভাতা বন্ধ করে দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতর। এমনতাবস্থায় বিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা ব্যহত হচ্ছে। তাই নতুন কোনো নির্বাহী প্রধান নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের তো শেষ নাই। যেহেতু শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। উনারা আগামীকাল তদন্তে আসার কথা রয়েছে। কিন্তু এইসব অভিযোগের ভিত্তি নাই। সঠিক নিয়মেই ভোটার তালিকা হয়েছে এবং নিয়ম অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।’
পাবনা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস পূর্বে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ৬ নভেম্বর, সেই হিসেবে আগামী অক্টোবরের ৬ তারিখের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসেবে আমাকে ইউএনও স্যার প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর আমি প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেই তফসিল দিয়েছিলাম। এখন ভোটার তালিকা করা তো ওনাদের (বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ) কাজ। এখন যেহেতু অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত করবো, তদন্তে যদি দেখি আইন লঙ্ঘন হয়েছে তাহলে তফসিল বাতিল করা হবে।’
বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানালেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহফুজা সুলতানাও। তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অনিয়মতান্ত্রিক কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শামসুল আলম/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ