বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতান এঁর ২৯তম প্রয়াণ দিবস।
দিবসটি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) শিল্পীর জন্মস্থান নড়াইলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শিল্পীর বাসভবনে কোরআনখানি, সুলতানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠন শিল্পীর সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি।
জেলা প্রশাসক ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতী শীল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, এস এম সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ হানিফ, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
পরে সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালায় আর্টক্যাম্প, এস এম সুলতান শিশুস্বর্গে শিশুদের লেখা পত্র প্রদর্শনী ও পাপেট শো অনুষ্ঠিত হয়।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাজমিস্ত্রি পিতা মেছের আলীর নান্দনিক সৃষ্টির ঘষামাজার মধ্য দিয়ে ছোটবেলার লাল মিঞার (সুলতান) চিত্রাঙ্কনে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ হয়। শিল্পী সুলতান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন। সুলতানের ছবি ভারতের সিমলা, পাকিস্তানের লাহোর, করাচি, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, বোস্টন, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ডের লন্ডন এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকায় খ্যাতনামা বিভিন্ন চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রদর্শিত হয়।
শিল্পী এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননা হিসেবেও স্বীকৃতি পান তিনি। সুলতানের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাঁর নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর চিরকুমার, অসাম্প্রদায়িক এই শিল্পী দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে নড়াইলের নিজ বাড়ির আঙিনায় সমাহিত করা হয়।
সারাদেশের বরেণ্য চারুশিল্পীদের অংশগ্রহণে আর্টক্যাম্প, নৌবিহার সহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতান যিনি জীবনের মূল সুর–ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে। আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস–ঐতিহ্য, দ্রোহ–প্রতিবাদ, বিপ্লব–সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তার শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। যাঁর ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণির দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হাল ফুটে উঠে, বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতানের ৪০ টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ৪ ও ৫ নং গ্যালারি । এছাড়া শিল্পীকে নিয়ে আঁকা দেশবরেণ্য বিভিন্ন শিল্পীদের চিত্রকর্মও স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে। ০৯ থেকে ১৭ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত চলবে এই চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ