ভারত বাংলাদেশের অভীন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা, গজলডোবা বাঁধ খুলে উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ পরিবার আকস্মিক বন্যায় প্লাবিতের প্রতিবাদে এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত তিস্তাপাড়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
উত্তরাঞ্চলের মানুষ প্রতিবছর অন্তত দুবার করে বন্যা প্লাবিত হয়। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা,লালমনিরহাট এবং নীলফামারীতে প্রতিবছর ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।
এ বছরের গত জুলাইয়ের ৫ তারিখে ভারী বর্ষণ এবং ভারতীয় পানির প্রবাহে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।আবার গত কাল থেকে উজানের পানির ঢল এবং অতিবৃষ্টির প্রকোপে উত্তরবঙ্গের ৫ জেলার ২৫ থেকে ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।বন্যার পানিতে বিলীন হয়ে গেছে দরিদ্র কৃষকের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল ফসলি জমি।শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় তীব্র তাপদাহ ও দীর্ঘ খরায় কৃষকরা ফসল চাষ করতে পারেনা।নদীভাঙ্গনে সকল ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়।
অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে যতটুকু চাষাবাদ করে তা তলিয়ে যায় বন্যার পানিতে।এতে হাজারা কৃষক পরিবার নিঃস্ব ও সর্বশান্ত হয়ে পড়ে।গবাদির পশুর মৃত্যু,বিশুদ্ধ পানির সংকট,শিশুদের নিরাপত্তার অভাব,শুকনো খাবারের অভাব, গর্ভবতী ও মুমূর্ষু রোগীদের দূর্ভোগ বর্ণনাতীত।বন্যার প্রকোপে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাহত হয় ফলে অনাহারে–অর্ধাহারে নির্ঘুম রজনী কাটে অগণিত মানুষের।
সরকারি ত্রাণ কার্যক্রমের অপর্যাপ্ততা,দ্রুত সাড়াদানে অবহেলা,ক্ষয়ক্ষতির ভৌতিক মূল্যায়ন এবং পুনর্বাসনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ইচ্ছামাফিক বিলি বন্টণ,দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো উত্তরাঞ্চলের দূর্যোগ–দুর্বিপাকে নাগরিক সমাজের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের অভাব এবং গণমাধ্যমের ভূমিকার অভাব প্রত্যন্ত এ সমস্ত এলাকার বানভাসি মানুষের ভাগ্যবিড়ম্বনাকে দীর্ঘায়িত করেছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ পেশা পরিবর্তন করে দেশের অন্যান্য প্রান্তে জীবীকার অন্বেষায় সস্তা শ্রমদাশে পরিণত হচ্ছে।
সীমাহীন উন্নয়ন বৈষম্য এবং নজিরবিহীন বঞ্চনায় উত্তরবঙ্গের জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।এসব সমস্যা স্থায়ী সমাধানে সরকারের অবহেলার চিত্র দৃশ্যমান।এ অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে কুড়িগ্রামের দারিদ্র্যের হার ৭০ শতাংশের উপরে। দেশের দরিদ্রতম ১০ জেলার ৫ টি রংপুর বিভাগে।রংপুর বিভাগের দারিদ্র্যের হার ২৪.৮ যা জাতীয় দারিদ্র্যের হারের চেয়ে ৬.৯ শতাংশ বেশি।
রংপুর কি বাংলা মায়ের সতীন?রংপুর বিভাগ দেশের খাদ্য চাহিদার ৫০ শতাংশ এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের কাচামালের ৭০ শতাংশের যোগানদাতা। অথচ এ অঞ্চলের জনগণের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন এবং বহুমাত্রিক দারিদ্র্য নিসরনে সরকারের দৃশ্যমান কোন প্রকল্প নেই।
রংপুর বিভাগের বিরাজমান দারিদ্র্য পরিস্থিতির যথাযথ মূল্যায়ন এবং দারিদ্র্য নিসরনে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের জোরালো তৎপরতা প্রয়োজন।
উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় বছরে দুবার বন্যা।তাই পিছিয়ে পড়া উত্তারাঞ্চলের জাতিগোষ্ঠীগুলোর সার্বিক উন্নয়নকল্পে সরকারকে অগ্রবর্তী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।বন্যা প্রতিরোধে কার্যকর নদীশাসন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন,অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনে জুতসই ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তিস্তাপাড়ে বহুমুখী শিল্প স্থাপন করতে রংপুর বিভাগের মানুষকে দেশের অর্থনীতির মূলস্রোতের সাথে একীভূত করতে হবে।
আল/ দীপ্ত সংবাদ