সিরাজগঞ্জে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পত্তি গোপন করার অভিযোগে সিরাজগঞ্জ–৪ আসনের সাবেক এমপির ব্যক্তিগত সহকারী ও বর্তমান উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (২৭ মার্চ) দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. খাইরুল হক বাদি হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযুক্ত মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল (৪৬) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌর এলাকার মধ্য ও পশ্চিমপাড়া বাখুয়া মহল্লার মৃত মীর শহিদুল ইসলাম পুন্নর ছেলে। বর্তমানে তিনি ঢাকার মনিপুর মিরপুর এলাকায় বসবাস করেন। এর আগে ২০২৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পযন্ত তিনি সিরাজগঞ্জ–৪ (উল্লাপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ফেব্রয়ারীতে মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয় দুদক।
মামলার নথিতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল তার সম্পদ বিবরণীতে ১৮,১০,০০০ টাকার মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ১,৪৮,১৯,৭৭৬ টাকার মূল্যের অস্থাবর সম্পদ মিলে ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ২৯ হাজার ৭৭৬ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই অনুসন্ধান করলে স্থাবর, অস্থাবর হিসেবে সর্বমোট ১ কোটি ৬৮ লক্ষ ৭৮ হাজার ৯৫৯ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। সুতারাং মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ১৮৩ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন পূর্বক মিথ্যা তথ্য প্রদান করে, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তাছাড়া অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জল ৪৫ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৯৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখেছেন যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অপরদিকে তার স্ত্রী মোছা. মোরশেদা মরিয়মের (৪৪) সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ১ কোটি ৪৬ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৬৯ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই অনুসন্ধান করলে স্থাবর, অস্থাবর হিসেবে সর্বমোট ১ কোটি ৫৯ লক্ষ ২৩ হাজার ৮৫৯ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১২ লক্ষ ৯৭ হাজার ১৯০ টাকা মূল্যের সম্পদ তথ্য গোপন পূর্বক মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও ১ কোটি ৩৯ লক্ষ ৫৩ হাজার ২৭৮ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখে দুর্নীত দমন কমিশন আইন,২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এদিকে অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে জানতে পারে যে, (১) নং আসামী মোছা. মোরশেদা মরিয়ম একজন গৃহিনী। তার নিজস্ব কোন আয় নেই। তার স্বামী (২) নং আসামী মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারীতে মাননীয় সংসদ সদস্য, সিরাজগঞ্জ–৪ এর ব্যক্তিগত সহকারী কাম–কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগদান করার পর তার স্ত্রীর নামে অধিকাংশ সম্পদ অর্জন করেছেন। সুতারাং আসামী মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল ঘুষ ও দুর্নীতর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দ্বারা তার স্ত্রী মোছা. মোরশেদা মরিয়মকে অসাধু উপায়ে উক্ত সম্পাদাদি অর্জনের প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন যা দন্ডবিধি ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ বিষয়টি অনুসন্ধান শেষে দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক পরিচালক মো. খাইরুল হক বাদি হয়ে মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল ও তার স্ত্রী মোছা. মোরশেদা মরিয়মের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, আমার সম্পাদ বিবরণী দুদুক কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। এখন তারা তদন্ত করবে করুক, আমার আর কি করার আছে।
বুধবার বিকালে দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. খাইরুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।
শিশির/ সুপ্তি/ দীপ্ত সংবাদ