এ যেন অচেনা সিলেট নগরী। নেই কোন কোলাহল। নেই যানজট, আর ব্যস্ততা। চারিদিকে সুনসান নীরবতা। শনিবার ঈদের দিন এমনটাই ছিল চিরচেনা ব্যস্ত সিলেট নগরের দৃশ্যপট।
সিলেটের জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, লামাবাজার, চৌহাট্টাসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় সড়কে ব্যস্ততা একেবারেই কম। অথচ গত কিছুদিন দৃশ্য কল্পনা করলে ঠিক তাঁর বিপরিত। ঈদের কিছুদিনে আগে মিনিটে কতো গাড়ির যাতায়াত! ফুটপাথে গায়ে গায়ে লেগে থাকে মানুষের ভিড়। সেই শহর সুনসান নীরবতা। এ যেন অদ্ভুত সিলেট।
এসব এলাকায় কমবেশি ব্যক্তিগত পরিবহন চলতে দেখা গেলেও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও রিক্সা চিলো খুবই কম। সিটি বাস ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল তো উধাও।
কোনো কোনো এলাকায়তো রিকশার টুংটাং শব্দও শোনা যায়নি। বাড়ি–ঘরের ভেতর থেকে আসা আওয়াজগুলোও ছিল ক্ষীণ। এ যেন গত একমাসের ব্যাস্ততার পর হঠাত গভীর ঘুমে পুরো নগর। নগরীর বেশ কিছু এলাকয় দোকানপাটও ছিলো বন্ধ–সব মিলিয়ে এক সুনসান পরিবেশ।
রমজান মাসজুড়ে গরম আর শেষ কয়দিন ঝড়বৃষ্টিতে সকালে ঈদের জামায়াত নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন সিলেটবাসী। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসও ছিল কালবৈশাখী ঝড়ের। তবে সকাল থেকে ঝলমলে রোদ কাটিয়ে দিয়েছে শঙ্কার মেঘ।
এদিকে ঈদে সকল কোলাহল আর উল্লাস যেন মিশেছিলো নগরের সিমানাজুড়ে থাকা চা বাগানগুলোতে।
পাহাড়, টিলা আর দিগন্ত বিস্তৃত চা–বাগান যেন সিলেটকে ঢেকে রেখেছে সবুজ চাঁদরে। যেখানে পর্যটকরা মুগ্ধ হন, প্রেমে পড়েন শীতল প্রকৃতির এই লীলাভূমিতে। সিলেট হচ্ছে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ রংয়ের নয়নাভিরাম চারণভূমি। গত তিনটি বছর করোনাভাইরাসের কারণে ঈদসহ বিভিন্ন সময়ে পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে যেতে ছিলো নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এবার তা নেই। তাই এবার সিলেটে পর্যটকরা যেন বাঁধনহারা।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সিলেটের তারাপুর চা–বাগানে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ছিলো। স্থানীয় পর্যটকসহ ঈদের দিনে হাজার হাজার পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
শনিবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক সিলেটের তারাপুর, লাক্কাতুরা, মালনীছড়াসহ বিভিন্ন চা–বাগান দেখতে ছুটে এসেছেন।
জানা যায়, ঈদের আগ থেকেই পর্যটকেরা হোটেল বুকিং শুরু করেন। ঈদের আগে আগেই সিলেটের হোটেল–মোটেলগুলোর ৬০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়। যাঁরা হোটেল বুকিং দিয়েছিলেন, তাঁরা ঈদ–পরবর্তী দুই থেকে চার দিন পর্যন্ত বুকিং দিয়ে রেখেছেন।
এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা পুলিশ ঈদের আগেই সিলেটের ১০টি পর্যটনকেন্দ্র ও জনসমাগমস্থল চিহ্নিত করেছে। এসব কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদাপোশাকেও নিযুক্ত রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এফএম/দীপ্ত সংবাদ