পবিত্র ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা কোরবানির পশুর বর্জ্যে ভরে আছে। যদিও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন—ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি শনিবার (৭ জুন) রাতেই ‘শতভাগ বর্জ্য অপসারণ’–এর দাবি জানিয়েছে, তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জানায়, তারা সাড়ে ৮ ঘণ্টায় ৯ হাজার ৫৭৫ টন বর্জ্য অপসারণ করেছে এবং শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একইভাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও রাত ১০টার এক বার্তায় দাবি করে, ৭৫টি ওয়ার্ডের সব বর্জ্য ১২ ঘণ্টার আগেই অপসারণ করা হয়েছে।
কিন্তু রবিবার (৮ জুন) সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলিগলি, রাস্তার পাশ, এমনকি বর্জ্য স্থানান্তরের অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতেও পশুর বর্জ্য পড়ে রয়েছে। এসব স্থানে পচন ধরা বর্জ্য থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে।
দক্ষিণ পীরেরবাগের একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, শনিবার বিকাল পর্যন্ত বর্জ্য সংগ্রহের গাড়ি এলেও রাতে আর আসেনি। অনেক জায়গায় অলিগলি থেকে বর্জ্য এক জায়গায় জড়ো করা হলেও তা সেখানেই রয়ে গেছে।
ডিএনসিসি‘র আওতাভূক্ত মধ্য পীরেরবাগ, পশ্চিম আগারগাঁও, মিরপুর–১১, বেনারসিপল্লি, কালশী এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকায় সকাল পর্যন্ত রাস্তায় বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশনের কনটেইনার বর্জ্যে ঠাসা, আবার কোথাও পলিথিনে মোড়ানো বর্জ্যে রাস্তার অর্ধেক অংশ ভরে গেছে।
ডিএসসিসি‘র আওতাভূক্ত কলাবাগান, হাজারীবাগ, নিউ পল্টন লাইন, টিকাটুলি, সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ী এলাকার বর্জ্য রবিবার সকালেও সরানো হয়নি। কলাবাগানের এক এসটিএসে দেখা গেছে, এখনো প্রায় এক–চতুর্থাংশ অংশে বর্জ্য জমে আছে, যেগুলো শনিবার সন্ধ্যায় এনে রাখা হয়েছিল।
সেখানে উপস্থিত একজন ভাঙারি সংগ্রাহক জানান, রাত তিনটা পর্যন্ত কর্মীরা কাজ করছিলেন, তারপর ক্লান্ত হয়ে চলে যান। সকাল থেকে কেউ আসেননি।
পচা গন্ধে নাক চেপে চলাফেরা করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। বিশেষ করে গরুর নাড়িভুঁড়ি, রক্ত ও চামড়ার উচ্ছিষ্ট অংশ থেকে ছড়ানো গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এসব বর্জ্য পরিবেশ দূষণ ও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না হলে তা মশা, মাছি, জীবাণু এবং নানা রোগজীবাণুর বিস্তার ঘটায়। প্রতি বছর কোরবানির সময় একই রকম সংকট দেখা দিলেও এর কোনো টেকসই সমাধান হচ্ছে না। প্রয়োজন পরিকল্পিত পূর্বপ্রস্তুতি, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা এবং সময়নিষ্ঠ মনিটরিং।