শুক্রবার, নভেম্বর ১৫, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ১৫, ২০২৪

ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি

টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের উজানের পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

মুহুরী নদীর ভাঙা বাঁধ দিয়ে উজান থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার ক্ষিপ্রতা কমেছে। তবে এখনও দুই উপজেলার ২০টি গ্রামের লোকালয়ে পানি রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বর্তমানে মুহুরী নদীতে পানি বিপদ সীমার ২০৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ফেনীপরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই কিলোমিটার এখনও পানির নিচে তলিয়ে আছে। এছাড়াও ২০টি গ্রামের গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে আছে। ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।

গত সোমবার ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজীর ২টি স্থানে ও দুপুরে পরশুরামের ১টি স্থানে বাঁধ ভেঙে দুই উপজেলার ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়।

এদিকে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮২৫ হেক্টর আমনের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে৷ বাঁধভাঙা পানিতে অন্তত ৩ শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য চাষীদের অবকাঠামো।

কৃষি বিভাগ জানায়, সহসাই পানি না নামলে এসব জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়াও জেলায় ১০ হেক্টর আমন বীজ তলা ও ১৫ হেক্টর সবজি খেত পানিতে ডুবে আছে৷

পরশুরামের মৎস্য চাষী আকবর হোসেন জানান, চাষের ৩টি পুকুরে অন্তত ১০ লাখ টাকার পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছ ছিলো। বাঁধভাঙা পানিতে পুকুর ভেসে চোখের সামনেই সব মাছ চলে গেছে। কিভাবে খাদ্যের ডিলারদের টাকা পরিশোধ করবো জানি না। চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি৷

ফুলগাজীর কৃষক মহসিন মিয়া বলেন, জুলাই মাসের শেষ দিকে সেচ দিয়ে ২ একর জমিতে আমন লাগিয়ে ছিলাম৷ কিন্তু গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও বাঁধভাঙা পানিতে আমাদের স্বপ্ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে৷ আজকালের মধ্যে পানি না সরলে রোপা আমন গাছ পঁচে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার সকালে আঞ্চলিক সড়কে চলাচলকারী আতাউর রহমান বলেন, মূল সড়কে পানি জমে গাড়ি চলাচল না করায় তিনি প্রায় ২ কিলোমিটার পানিতে হেঁটেছেন। কোমর পর্যন্ত ভেজা কাপড়ে তিনি সারাদিন কিভাবে থাকবেন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

পরশুরাম সরকারী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাবিব উল্লাহ জানান, পরীক্ষার আর মাত্র ৬দিন বাকি। চারিদিকে থৈই থৈই পানি। আজ ১০ আগস্ট কলেজে এডমিড কার্ড দিবে। পানি ভেঙে কিভাবে কার্ড সংগ্রহ করবো বুঝতে পারছি না।
ঘরে পানি, সড়কে পানি। পরীক্ষার কোন প্রস্তুতি নেয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১৭ আগস্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া ও পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা শমসাদ বেগম জানান, দুই উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজারেও বেশি মানুষ পানিবন্দি। বানভাসি মানুষদের জন্য শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।

ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮২৫ হেক্টর আমনের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। ১০ হেক্টর আমন বীজ তলা ও ১৫ হেক্টর সবজি ক্ষেতও পানিতে নিমজ্জিত। সহসাই পানি না নামলে এসব জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৩৭৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কোন ধরনের সহায়তা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের প্রদান করা হবে।

ফেনীস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদ শাহরিয়ার জানান, উজানে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানে বৃষ্টি বন্ধ হলে এদিকেও প্লাবন বন্ধ হয়ে যাবে। পানির অতি গতির কারণে বাঁধগুলোতে সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না। তিনটি স্থানে পানির গতি কমে গেলে বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

 

মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More