পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬ বছরেও চুক্তির পুর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা বেড়েছে পাহাড়ের মানুষের মধ্যে। পাশাপাশি চুক্তি সম্পাদন করা দুটি দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মধ্যেও বেড়েছে দুরত্ব। দুরত্ব কমিয়ে দ্রত চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলছেন উভয় দলের নেতারা।
১৯৯৭সালে ২ডিসেম্বর দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম ও রক্তপাত বন্ধ করে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করে জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)। যা শান্তি চুক্তি নামেই পরিচিত। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ ২৬ বছরেও চুক্তির পূণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা বেড়েছে স্থানীয়দের মাঝে। শান্তির জন্য চুক্তি করা হলেও এখনও নিয়মিত শোনা যায় আধপিত্যকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের হত্যাকান্ড।
জনসংহতি সমিতি(জেএসএস) নেতারা মনে করেন চুক্তির মৌলিক অধিকারগুলো এখনও অবাস্তবায়িত রয়েছে। ভুমি ব্যবস্থাপনা, বনও পরিবেশ, উদ্বাস্তু ও প্রত্ত্যাগত শরণার্থীদের যথাযথ পুর্নবাসন করা হয়নাই। চুক্তির ২৫টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। এতে ক্ষোভের পাশাপাশি না ধরেনের সংকট দেখা দিচ্ছে পাহাড়ে। তাদের সরকারের প্রতি প্রত্যাশা ২৬ বছরে এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। এবার যাতে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করে পার্বত্যাঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সরকার দলীয় নেতারা মনে করেন চুক্তির কিছু মৌলিক ধারা অবাস্তবায়িত রয়েছে সেটা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক আলাপ আলোচনা। চুক্তির ৪৮টি ধারা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে। আরো বেশ কিছু ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে এবং বাস্তবায়নের কাজ চলছে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চুক্তি বিরোধীদের সাথে আতাত করে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নই। এতে চুক্তির পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দীর্ঘায়ীত হচ্ছে। আস্থার সংকট যত দ্রুত কমিয়ে আনা যাবে তত দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি করেছে স্থানীয়দের।
এড্যাভোকেট সুচমিতা চাকমা জানান, ২৬বছরেও ভুমি ব্যবস্থাপনা, বনও পরিবেশ, উদ্বাস্তু ও প্রত্ত্যাগত শরণার্থীসহ অনেক ধারা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। যা দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
আর স্কাউট সংগঠক নুরুল আবছার জানান, শান্তি চুক্তির ফলে পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি ছিড়েছে। আমরা চাই সে শান্তি অব্যহত থাকুক। চুক্তির যেসকল ধারা অব্যস্তবায়িত রয়েছে তা পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মধ্যেমে সমাধান করা হোক।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ–সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার জানিয়েছেন, আর অপেক্ষা নই, এইবার যাতে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয় সেটাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার জানিয়েছেন, ২৬ বছরে চুক্তির বেশির ভাগ ধারা বাস্তবায়িত হলেও মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চুক্তি বিরোধীদের সাথে জোট করে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নই। পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোও বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য: বিগত ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন হয়, এতে ৭২টি ধারা অন্তভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: ২৬ বছরে পার্বত্য শান্তিচুক্তি
মিশু দে/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ