উত্তরের খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত জেলা নওগাঁ। নওগাঁয় উৎপাদিত চালের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। বর্তমানে সেই ধানের পর আমই হচ্ছে নওগাঁর দ্বিতীয় প্রধান ফসল। অপরদিকে বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত জেলার সাপাহার, পত্নীতলা, পোরশা, ধামইরহাট, নিয়ামতপুর উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক ফসলে পরিণত হয়েছে এই আম। এছাড়া অন্যান্য উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়ছে এই আম চাষ। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে নওগাঁর আম।
ইতোমধ্যেই নওগাঁর নাকফজলি আম পেয়েছে জিআই সনদ। নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটিতে উৎপাদিত সুমিষ্ট, রসালো ও সুস্বাদু আম্রপালি আমের খ্যাতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছরই রাজশাহী ও চাঁপাইকে ছাড়িয়ে আম উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে নওগাঁ।
আমের সুখ্যাতিকে দেশসহ বিশ্বব্যাপী আরো প্রসারিত করতে প্রথমবারের মতো আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নওগাঁর সাপাহারে আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুদিন ব্যাপী ‘ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল–২০২৫’।
‘আসুন সাপাহারের রূপালি আমের স্বাদ ছড়িয়ে দেই দেশ–বিদেশে’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে উৎসবটি বসবে সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। উৎসবে থাকবে আম বিক্রয় ও প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন স্টল।
ক্রেতারা বিশেষ ছাড়ে আম কিনতে পারবেন। মেলায় থাকবে তাৎক্ষণিক কুরিয়ার সার্ভিস, যার মাধ্যমে দেশ–বিদেশে আম পাঠানো যাবে। থাকবে আম দিয়ে তৈরি নানান খাবারের স্টল, আম চাষিদের প্রোফাইল ও অনলাইন সরবরাহকারীর তথ্যসমৃদ্ধ স্টল। ফেস্টিভালে ১০০ জন অংশগ্রহণকারীর জন্য দুদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ সেশন আয়োজন করা হবে।
প্রশিক্ষণে আমের রোগবালাই প্রতিরোধ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি আম রপ্তানি এবং বাজার সম্প্রসারণ নিয়ে উন্মুক্ত সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে; যেখানে অংশ নেবেন সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা। প্রতিদিন বিকেলে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আম ভিত্তিক ভোজন প্রতিযোগিতা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ১০ বছরে নওগাঁয় আমের নিরব বিপ্লব ঘটেছে। এমন ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল শুধু নওগাঁর আমকেই নয় দেশের কৃষি খ্যাতকে দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে পাথেয় হিসেবে কাজ করবে। গত ২২ মে থেকে নওগাঁসহ দেশের বাজারে আসতে শুরু করেছে নওগাঁর আম। আর ১৮ জুন থেকে আম্রপালি বাজারে আসা শুরু করেছে। চলতি বছর জেলার ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ হয়েছে।
নওগাঁর ঐতিহ্য আম্রপালি, নাক ফজলি জাতের আমসহ ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি, কাটিমন, গৌড়মতি, বারি–৪ আমসহ দেশি–বিদেশি প্রায় ১৬ জাতের আম চাষ করেছেন চাষিরা। যেখান থেকে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্টিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছর ৪ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে।
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খাঁন জানান, নওগাঁয় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে নওগাঁকে দেশ ও বিদেশের মানুষরা নতুন করে চিনবে ও জানবে। এমন উদ্যোগ নি:সন্দেহে স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। পাশাপাশি এই মেলার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় আম চাষিরা ব্যাপক ভাবে উপকৃত হবেন। এছাড়া এমন আয়োজন নওগাঁর আমকে নিয়ে দেশজুড়ে এক শ্রেণির কুচক্রি ব্যবসায়ীদের গড়ে তোলা মিথ্যে যড়ষন্ত্রকেও ধুলায় মিশে দিতে সক্ষম হবে। এমন প্রশংসনীয় উদ্দ্যোগ ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালকে শতভাগ সফল করতে নওগাঁবাসীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, নওগাঁর ব্র্যান্ড হচ্ছে আম। দেশের অনেক স্থানে নওগাঁর আমকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নওগাঁর আমকে রাজশাহী ও চাঁপাই বলে বিক্রি করে আসছে। এমন নানা কর্মকাণ্ডে দেশজুড়ে নওগাঁর আমের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। নওগাঁর আমের প্রতি ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি কাড়তে এবং দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভোক্তাদের কাছে নওগাঁর আমের সুখ্যাতির সুনাম আরো প্রসারিত করতে এমন মেলার আয়োজন করা। ইতোমধ্যেই জেলার সাপাহার আম বাজার দেশের দ্বিতীয় আমের বাজারের পরিচিতি পেয়েছে। এছাড়া প্রচারেই প্রসার তাই সাপাহারে যে পরিমাণ আম উৎপাদিত হয় তা দিয়ে সারা বছর দেশের আম ভিত্তিক শিল্পকারখানা চলতে পারে।
অপরদিকে নওগাঁর আমকে ঘিরে মধ্যস্বত্বভোগীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হলেও আম উৎপাদনের কারিগর আম চাষিরা ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর। তাই আমের পাশাপাশি আম চাষিরাও যেন লাভবান হোন এবং নতুন করে নওগাঁর আমের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার প্রত্যয় সামনে রেখে এমন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলার এই প্রধান কর্মকর্তা।
আব্দুর রউফ রিপন/এজে/দীপ্ত সংবাদ