আঞ্চলিক বৈষম্যের কারণে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্য, উচ্চ বেকারত্ব নিরসন এবং তিস্তা জায়ান্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যাক্ষের কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রংপুর বিভাগ বৈষম্য নিরসন আন্দোলনের সংগঠক মেহেদী হাসান সুমনের সঞ্চালনায় সভায় সভাপত্বিত করেন সমাজ–রাজনীতি বিশ্লেষক ও শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
প্রায় দুই কোটি মানুষ নিয়ে রংপুর বিভাগ গঠিত। অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদেশেকর্মী প্রেরণ, নদী ভাঙনরোধ, বহুমুখী দারিদ্র্য নিরসন এবং অন্যান্য খাতে বাজেট বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগের উন্নয়নে আলাদা কোনো নীতি–কৌশল প্রণয়ন কিংবা বৃহৎ কোন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে আমন্ত্রিত আলোচকের বক্তব্যে নদী গবেষক, সংগঠক ও রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উত্তরাঞ্চলের নদী এবং নদী অববাহিকার জনজীবন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। রংপুর বিভাগের মানুষ যে চরমতম বৈষম্যের শিকার তা দিবালোকের মত স্পষ্ট।দেশের খাদ্য চাহিদার ৫০ শতাংশের যোগান আসে রংপুর বিভাগ থেকে। অথচ দেশের দরিদ্রতম ১০ জেলার পাঁচটি রংপুর বিভাগের। বাকি তিনটি জেলাও দারিদ্র্য সূচকের তলানিতে।
তিনি বলেন, বছরে দুবার বন্যা এবং শুষ্ক মৌসুমে খরায় এ অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেড়ে চলেছে। এসব বঞ্চনা নিরসনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ বিভাগের শিক্ষক ড. মো. গোলাম রাব্বানী বলেন, উন্নয়ন বৈষম্যের কারণে রংপুর অঞ্চলে শিল্পায়নে পিছিয়ে পড়েছে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় রংপুর বিভাগে দিন দিন দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। রংপুর বিভাগের দারিদ্র্যের হার হ্রাসে প্রয়োজন দ্রুত শিল্পায়ন।
ভারত–বাংলাদেশের অভীন্ন নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পদক্ষেপ ও তিস্তা জায়ান্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে কৃষি জমি এবং বসতভিটা রক্ষায় গুরুত্বারোপ করে দীপ্ত টিভির নিউজ এডিটর এবং অনলাইন ইনচার্জ মাসউদ বিন আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রংপুর বিভাগের আট জেলার জনগণ বিরাজমান উন্নয়ন বৈষম্য ও বহুমাত্রিক দারিদ্র্য নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। তারা আঞ্চলিক বৈষম্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি চায় এবং দেশের অর্থনীতির মূল স্রোতধারার সঙ্গে একীভূত হতে চায়। সরকারকে এসব বিষয়ের আশু সমাধানে অগ্রবর্তী ভূমিকা রাখা উচিত।
সভাপতির বক্তব্যে ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভৌগোলিক অবস্থিতি বড় কোনো অন্তরায় নয় বরং রাজনৈতিক ও আমলা তান্ত্রিক অবহেলার কারণে রংপুর বিভাগে শিল্পায়ন, বৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না।সরকারের সদর্থক ভূমিকার পাশাপাশি রংপুর বিভাগের মানুষকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার হতে হবে। এ অঞ্চলের বৈষম্যের ধারাবাহিকতার চিত্র প্রকট আকার ধারণ করেছে। এটি নিরসনে ধারাবাহিকভাবেই কাজ করতে হবে।
আলোচনায় আবুল আলা মো. রিসালাত বলেন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্নে দেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া একটি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী মনে করেন, সংস্কার প্রক্রিয়াকে টেকসই করতে রংপুর বিভাগের দুই কোটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টি সরকারকে অধিকতর গুরুত্ব সহকারে নেয়া প্রয়োজন। যেখানে রংপুরের মানুষের প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।
উক্ত সভায় রংপুর বিভাগ বৈষম্য নিরসন আন্দোলনের পরবর্তী বিভিন্ন কর্মসূচি এবং কর্মপন্থা নির্ধারণের বিষয়ে মতবিনিময় করা হয়। বৈষম্যের খাত ভিত্তিক চিত্র, বিগত বাজেট সমূহের এডিপি বরাদ্দ বিশ্লেষণ, অসম বাজেট বরাদ্দ, দারিদ্র্যের বাস্তব পরিস্থিতি ও পরিসংখ্যান এবং লিফলেট প্রস্তুত ও প্রচারণা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রাফিউল ইসলাম রাঁঙ্গা, ব্যাংক কর্মকর্তা মেহেরুল্লাহ মিঠু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা।