বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫

জনরোষে পলাতক স্বৈরশাসকরা ফিরতে পারেনি রাজনীতিতে

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন দেশে যুগে যুগে স্বৈরশাসকের আবির্ভাব ঘটেছে। তাদের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতননিপীড়নের শিকার হয় দেশের মানুষ। বেশিরভাগ স্বৈরশাসকের পরিণতি হয়েছে, জনরোষের মুখে দেশ ত্যাগের মধ্য দিয়ে। তাদের কেউই আর রাজনীতিতে ফিরতে পারেনি।

মিশরের ফারাও আখেনাটন থেকে শুরু করে, যুগে যুগে বিভিন্ন দেশে স্বৈরশাসকরা এসেছেন দৃশ্যপটে। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্রজনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরইমধ্য দিয়ে ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনের পতন হয়।

তবে এখন আলোচনায়, পলাতক স্বৈরশাসকরা কি ফিরতে পেরেছেন রাজনীতিতে? ইতিহাস বলে, কেউই ফিরতে পারেননি।

আশির দশকে, ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন। তবে তাতে ভ্রুক্ষেপ ছিল না দেশটির প্রেসিডেন্ট মার্কোসের। একপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে মাঠে নামে ক্ষুব্ধ জনতা। গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৮৬ সালে দেশ থেকে পালিয়ে যান তিনি। পরে তিন বছরের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপে নির্বাসনেই মৃত্যু হয়, ক্ষমতার শোকে বিপর্যস্ত মার্কোসের।

করুণ পরিণতি হয়েছিল পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফেরও। এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখল করেছিলেন তিনি। নানা বিতর্কের মাঝেই আট বছর দেশ শাষণ করেন মোশাররফ। ২০০৮ সালে নির্বাচনে তার দলের শোচনীয় পরাজয় ঘটলে, পার্লামেন্টে অভিশংসনের মুখে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন। এদেশওদেশ ঘুরতে ঘুরতে শেষ পর্যন্ত দুবাইয়ে মারা যান, পাকিস্তানের এই সামরিক স্বৈরশাসক।

দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলংকা। ২০২২ সালে পতন হয় স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের। মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন রাজাপাকশে। এই পরিণতির জন্য দায়ী করা হয়, তার পরিবারকেই। জনরোষের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়, রাজাপাকসের পরিবার। ঘটনার দেড় মাস পর বিশেষ নিরাপত্তা নিয়ে দেশে ফেরত আসেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। তবে, এখনও রাজনীতিতে ফিরতে পারেননি তিনি।

তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক জাইন এলআবিদিন বেন আলির বিরুদ্ধে ২০১১ সালে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়, যা জেসমিন বিপ্লব নামে পরিচিত। এটি একসময় জন্ম দেয় আরব বসন্তের। সে বিপ্লবের একপর্যায়ে বেন আলির ২৩ বছরের মসনদ হাতছাড়া হয়। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সপরিবারে সৌদি আরবে পালিয়ে যান বেন আলি। এরপর আর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। সৌদি আরবে নির্বাসিত জীবনযাপন করেন। ৮৩ বছর বয়সে সেখানেই মৃত্যু হয় তার।

আফগানিস্তানের ২০১৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করেন আশরাফ গানি। তবে ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্কিন সৈন্যদের শেষ দলটি আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এর সঙ্গে সঙ্গেই একের পর এক শহর দখলের অভিযান শুরু করে দেয় তালেবানরা। এরই ধারাবাহিকতায় কাবুলেও অভিযান চালায়। তালেবানদের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি চলে আসার খবর পেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় আশরাফ গানিকে। কিন্তু তিনি খালি হাতে দেশত্যাগ করেননি। বরং চারটি গাড়ি ও হেলিকপ্টারে ভরে নগদ অর্থ নিয়ে ওমান হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান। ২০২১ সাল থেকে সেখানেই মানবিক আশ্রয়ে আছেন এ নেতা। নিজ দেশ ও রাজনীতি কোনোটিতেই ফেরা হয়নি আফগান এ নেতার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বৈরাচারী শাসকরা যখন গণরোষের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন, তখন তাদের বেশিরভাগই দেশত্যাগে বাধ্য হন। কোনো কোনো স্বৈরশাসক নিজ দেশে ফিরেছিলেন ঠিকই তবে তাদের কেউই আর সেভাবে ফিরতে পারেননি রাজনীতিতে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান বলেন, ‘‌এ ধরনের ঘটনায় ফেরার চান্স থাকে, যদি পার্টি হিসেবে তারা খুবই শক্তিশালী হয়। শক্তিশালী না হলে ফেরার খুব বেশি সুযোগ থাকে না।’

 

নাদিরা জাহান/এসএ/দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More