মসজিদটির নাম কাবিল ভূঁইয়া জামে মসজিদ। ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের উত্তর হরিপুর গ্রামে কাবিল ভূঁইয়া বাড়ির সামনে অবস্থিত।
মসজিদটি একটি গ্রামকে তথা একটি এলাকাকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশ–দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মসজিদটির ছবি ছড়িয়ে পড়লে দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীর মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই আসছেন দূরদূরান্তের দর্শনার্থীরা। তারা পড়ছেন নামাজ, করছেন ভিডিও, তুলছেন ছবি।
কাবিল ভূঁইয়া বাড়িরই বাসিন্দা এরশাদ উল্যাহ ভূঁইয়া জানান, মসজিদটি শতবর্ষী। ছোটবেলায় দেখেছেন, সেখানে গ্রামের একাধিক সমাজের লোকজন পবিত্র জুমার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। একসময় টিনের ঘর করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর ছাদ ঢালাই করে একতলা মসজিদ ভবন নির্মাণ করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদ ভবনটি জরাজীর্ণ হতে থাকে। তখন মসজিদের সভাপতি মো. দিলদার হোসেন ভূঁইয়াসহ সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বৈঠকে মসজিদ ভবনটি দোতলা দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে মসজিদের নির্মাণের জন্য ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় নতুন আঙ্গিকে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে কাজ করে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় নির্মাণকাজ শেষ হয়। গত ২১ জুলাই পবিত্র জুমার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ বেলাল ভূঁইয়া জানান, এ মসজিদ স্থাপত্য নকশা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক স্থপতি মো. রাশিদুল হাসান। তাঁরই তত্ত্বাবধানে একজন উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়মিত তদারকি করেছেন নির্মাণকাজের।
ফেনী–ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের বাংলাবাজার থেকে আঁকাবাঁকা পথে ওই মসজিদে যেতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। মসজিদের সামনে পৌঁছাতেই এর অন্যন্য নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ হতে হয়। দূর থেকে মসজিদের সামনের অংশ দেখতে অনেকটা টেলিভিশন আকৃতির মনে হয়। মসজিদটি দুইতলাবিশিষ্ট ভবন। এর সুউচ্চ বিশেষ ধরনের মিনারটি মসজিদটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদটির সামনে দিয়ে গেছে একটি গ্রামীণ পাকা সড়ক। তারপর মসজিদ বরাবর সোজা একটি পুকুর। মসজিদের ঠিক সামনেই পুকুরপাড়ে একটি ছোট আমগাছ। সড়ক থেকে সোজা মসজিদে প্রবেশপথে রেলিং দিয়ে বেষ্টনী করা হয়েছে। বেষ্টনীর দুই পাশ দিয়ে ৮টি সিঁড়ি পেরিয়ে মসজিদে ঢুকতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শহীদুল্লাহ জানান, এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। কিছুদিন আগেও ঢাকা থেকে বেশ কয়েকজন মসজিদ দেখতে আসেন। ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তাঁরা অনেক উঁচু থেকে ছবি তোলেন, ভিডিও করেন। এছাড়া অনেক দর্শনার্থী আসেন যাঁরা মসজিদের সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি নামাজ আদায় করেন।
কাবিল ভূঁইয়া জামে মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. দিলদার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, চার শতক জায়গার ওপর এ দোতলা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। নিচতলা ও দোতলা মিলে এ মসজিদে একসঙ্গে ৫০০ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদ নির্মাণে এ যাবৎ প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। অনেকের অনুদানে নির্মিত মসজিদটিতে ইটের তেমন কোনো কাজ হয়নি। পাথরের ঢালাই ও কাচ দিয়েই কাজ শেষ করা হয়েছে।
মামুন / আল / দীপ্ত সংবাদ