পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, যারা বিদেশে কাজ করেন তারা আমাদের দেশের মেরুদন্ডের মতো। তাদের কষ্টের টাকায় দেশ ও তাদের নিজের পরিবার উপকৃত হয়। তাই আমাদের উচিত তাদের সমস্যা সমাধানের আরও বেশি মনোযোগী হওয়া। যারা নিম্নআয়ের প্রবাসী, রেমিটেন্স পাঠানোর সময় তাঁদের জন্য ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি। যারা বেশি রেমিটেন্স পাঠাবে তাদের বেশি সুবিধা দেওয়া উচিত, তাঁদের সন্তানদের স্কুলে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি ও সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ক্রিস্টাল বল রুমে প্রবাসী দিবসের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রবাসী দিবস চালুর পিছনে স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি ও সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের অবদান অনস্বীকার্য। প্রবাসী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আমরা এখন বিশ্বের ষষ্ঠ। বিশ্বের প্রায় ১৪৭টি দেশে আমাদের প্রবাসীরা রয়েছেন। প্রবাসীদের জন্য আমরা ইতিমধ্যে অনেক সুবিধা চালু করেছি। প্রবাসীদের জন্য আইনটি হালনাগাদ করা হচ্ছে। শিগগিরই আমরা প্রবাসীদের জন্য ইনস্যুরেন্স চালু করবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, কম সুুবিধাভোগী প্রবাসীরা অনেকে নিবন্ধনের বাইরে থাকেন। তাদের তালিকায় নিয়ে আসা উচিত। ফিলিপাইন আমাদের চেয়ে কম প্রবাসী পাঠিয়ে অনেক রেমিটেন্স পাচ্ছে কারণ তারা প্রশিক্ষন দিয়ে কর্মী পাঠায়। আমাদেরও উচিত যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে কর্মী পাঠানো।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস–চ্যান্সেলর অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত প্রবাসীদের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া। একইসঙ্গে প্রবাসীরা যেসব দেশে অবস্থান করছেন সেসব দেশেরও উচিত প্রবাসীদের বেশি করে সম্মান জানানো। কারণ এসব প্রবাসী ছাড়া সেসব দেশও অচল।
২০০৫ সাল থেকে ‘এনআরবি ডে‘ বা প্রবাসী দিবস প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি ও সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সাল থেকে ৩০ ডিসেম্বর নিয়মিত দেশে ও বিদেশে প্রবাসী দিবস উদ্যাপন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি এবারও আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার দুদিনব্যাপী রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে প্রবাসী দিবস আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে।
স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি এবং সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম ই চৌধুরী শামীম বলেন, প্রবাসীদের সমস্যা দূরীকরণ ও সম্ভাবনাকে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে আমরা প্রথম ‘এনআরবি ডে‘ বা প্রবাসী দিবসের দাবি জানিয়ে আসছি ও নিজেরা ২০১৭ সাল থেকে প্রবাসী দিবস উদযাপন করে আসছি। প্রবাসীদের মর্যাদার সংকট ও দেশের উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির প্রয়াসে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের জন্য একটি বিশেষ দিবস ঘোষণা ও দিনটি উদ্যাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। গত ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৩০ ডিসেম্বর দিনটিকে ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস‘ উদ্যাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রবাসী দিবসের প্রথম দিনের আয়োজনে ছিল প্রবাসী দিবসের থিম সং, লোগো উন্মোচন, আলোচনা অনুষ্ঠান। এ দিনে দেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য জাপানের তাকুশোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল জাপানিজ স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক পেমা গিয়ালপোকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
এছাড়া প্রবাসে কাজ করতে যেয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন এমন ছয়জন প্রবাসীর সন্তানদের হাতে শিক্ষা সহায়তা হিসেবে নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়।
যারা পেলেন শিক্ষা সহায়তা
মালেশিয়ায় শ্রমিক হিসেবে গিয়ে মৃত্যবরণ করা রহিম মোল্লার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে রোকসানা, ওমানে মৃত্যবরণ করা আতাউর রহমানের মেয়ে আশা রহমান, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ভিসায় গিয়ে মৃত্যুবরণ করা হালিম মিয়ার মেয়ে মোছা. হামীমা, ওমানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে মৃত্যবরণ করা আমিনুল ইসলামের ছেলে ফাহিম মিয়া, সৌদি আরবে মৃত্যুবরণ করা আবু তাহের খায়রুল হকের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে আবু তাহের, ও মালয়েশিয়ায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা বাচ্চু মিয়ার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে তাবাসসুম।
অনুষ্ঠান পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী দিলারা আফরোজ খান রূপা।
আগামীকাল শনিবারের (৩০ ডিসেম্বর) কার্যক্রম তুলে ধরে এম ই চৌধুরী শামীম বলেন, দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান একই স্থানে শুরু হবে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি ও জাপানের তাকুশোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল জাপানিজ স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক পেমা গিয়ালপো। এই দিনে এনআরবি–পিবিও সাহিত্য–সংস্কৃতি সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হবে। একই দিনে ২০২৪ সালের এনআরবি–পিবিও সম্মেলন এবং প্রবাসী দিবস উৎসবের ঘোষণা দেওয়া হবে।
এছাড়া প্রবাস থেকে দেশে ফিরে এসে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, প্রযুক্তি, আর্থিক সেবা, কৃষি ও সংস্কৃতিসহ সাত খাতে অবদান রাখা সাতজন সেরা উদ্যোক্তাকে ‘এনআরবি ডে অ্যাওয়ার্ড‘ প্রদান করা হবে ও জাপানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক নিয়ে প্রবীর বিকাশ সরকারের লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে।
অনুষ্ঠানে এনআরবি পিবিও সাহিত্য–সংস্কৃতি সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়, যা আগামী বছরের ২২,২৩,২৪ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ও ২০২৪ সালের পিবিও–প্রবাসী দিবস উৎসবের ঘোষণাও দেওয়া হয় যা আগামী বছরের ২৭, ২৮,২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছর প্রবাসী উৎসব ঢাকায়, ২০২৫ সালে সিলেটে, ২০২৬ সালে চট্টগ্রামে, ২০২৭ সালে রাজশাহীতে, ২০২৮ সালে খুলনায়, ২০২৯ সালে বরিশালে ও ২০৩০ সালে রংপুরে।
এসএ/দীপ্ত নিউজ