প্রায় সকল খেলায় প্রযুক্তি প্রবেশ করলেও ফুটবলে কিছুটা দেরীতে ঢুকছে। গত বিশ্বকাপে VAR ঢুকেছিলো। যা ক্রিকেটের থার্ড/টিভি আম্পায়ারিং এর মতো। ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কাতার বিশ্বকাপে ফিফার নতুন প্রযুক্তি “সেমি অটোমেটেড অফসাইড টেকনোলজি” ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ প্রযুক্তিতে ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়ালরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অফসাইডের অ্যালার্ট পাবেন। মাঠের রেফারির সঙ্গে কথা বলে তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত রেফারির হাতে বলেই এটিকে ‘সেমি অটোমেটেড’ পদ্ধতি বলা হচ্ছে।
ইকুয়েডর-কাতার ম্যাচে খেলার পঞ্চম মিনিটেই দেখা গেলো এআইভিত্তিক ‘অফসাইড টেকনোলজি’। এনার ভ্যালেন্সিয়া গোলটা করলেন ঠিকই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাথে সাথে অফসাইডের কথা জানিয়ে দিলো ভিডিও রুমে থাকা তৃতীয় রেফারিকে। তার কাজ ছিল অফসাইডের তথ্যের সত্যতা আরও একবাই করা।
প্রতিটি স্টেডিয়ামে ছাদের নিচে বিভিন্ন এঙ্গেলে যাতে পুরো মাঠটিকে মনিটরিং এ আনা যায় এর জন্য মোট ১২টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে এই প্রযুক্তির জন্য। এর মাধ্যমে মাঠে বলের গতিবিধি, অবস্থান দেখা যাবে। বলের সঙ্গে খেলোয়াড়ের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে খেলোয়াড়দের শরীরে ২৯টি জায়গার অবস্থানও দেখা যাবে ক্যামেরার মাধ্যমে। সেকেন্ডে প্রতিটি খেলোয়াড়ের শরীরের অবস্থানের ৫০টি করে তথ্য মিলবে এই প্রযুক্তিতে। এতে বল ও খেলোয়াড়ের সঠিক অবস্থান বোঝা যাবে।
এবারের বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বল ‘আল-রিহলা’র ভেতরেও ইনার্শিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিট (আইএমআই) সেন্সর বসানো হয়েছে। অফসাইডের ব্যবধান খুব অল্প কিংবা একেবারে সূক্ষ্মতম হলেও সেটি ধরা পড়বে এই সেন্সরে।
বলের মাঝে বসানো আছে এই সেন্সর। সেকেন্ডে ৫০০ বার মাঠে বলের অবস্থান জানিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি। খেলোয়াড়দের হাঁটু থেকে শরীরের অবস্থান এবং তার সঙ্গে কিক নেওয়ার সময় কিংবা রিসিভের সময় বলের অবস্থানও জানা যাবে। সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করে অফসাইড হলে তা সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও অফিশিয়ালদের জানিয়ে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।
অর্থাৎ, সতীর্থের পাস থেকে বল রিসিভের সময় কেউ অফসাইড হলে তৎক্ষণাৎ ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) কক্ষে জানিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি। ভিএআর কক্ষ থেকে মাঠের রেফারিকে সিদ্ধান্ত জানানোর আগে গোটা বিষয়টি ম্যানুয়ালি একবার পরীক্ষা করে নেওয়া হবে। আর পুরো প্রসেসটিই বানানো হয়েছে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি বা এআই এর মাধ্যমে। ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় নির্ভুল ডেটাসেট এবং কার্যকরী অ্যালগরিদম।
যেহেতু হাতে-কলমে যাচাই করতে হয়, সেহেতু গতকালের ওই ঘটনায় সিদ্ধান্ত দিতে কিছুটা সময় লাগলো। এজন্য অন ফিল্ড রেফারি অর্সাতো মাঠেই অপেক্ষা করলেন তৃতীয় রেফারির সংকেতের জন্য।
সংকেত আসলো অফফসাইডের। যা সাইড রেফারি ধরতে পারেননি। ধরলো মেশিন। এ প্রযুক্তির সবে যাত্রা শুরু। কিছু ভুল ভ্রান্তি হয়তো হবে। কিন্তু মাঠের রেফারির চেয়ে এআইভিত্তিক এ টেকনোলজি তুলনামূলক নির্ভুল কাজ করবে- এটা সত্য। এমন দিন আসবে সামনে- মাঠের রেফারি লাগবেই না। মেশিনই করবে রেফারিং।
আগামী দিনগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। কম্পিউটারভিত্তিক মেশিনই আপনাকে আমাকে চালাবে। আমি আপনি আমজনতা পপকর্ন হাতে নিয়ে জাস্ট বসে থেকে দেখবো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর জীবন ভালো নাকি খারাপ তা ভবিষ্যৎ বলে দিবে!
– মোহাম্মাদ আলী, কনসালটেন্ট, আইসিটি ডিভিশন