ইসলামি শরিয়তে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর–নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ। তবে অসুস্থতা কিংবা বার্ধক্যজনিত কারণে অনেকে যদি রোজা রাখতে অক্ষম হয়। এ অবস্থায় তাদের করণীয় কী? শরীয়ত ওই ব্যক্তির জন্য কোনো বিধান রেখেছে কি না দেখতে হবে এবং রোজা নিয়ে শরীয়তের বিধিবিধানগুলো জানা একজন মুমিনের কর্তব্য।
পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার ১৮৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘(রোজা) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে পীড়িত কিংবা মুসাফির সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে এবং শক্তিহীনদের (একেবারেই অক্ষম) ওপর কর্তব্য হচ্ছে ফিদিয়া প্রদান করা, এটা একজন মিসকিনকে অন্নদান করা এবং যে ব্যক্তি নিজের খুশিতে সৎ কাজ করতে ইচ্ছুক, তার পক্ষে তা আরও উত্তম আর সে অবস্থায় রোজা পালন করাই তোমাদের পক্ষে উত্তম, যদি তোমরা বোঝ।’
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যারা সওম পালনে সক্ষম নয়, তাদের জন্য একজন মিসকিনকে খানা খাওয়ানোই ফিদিয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ আয়াত রহিত হয়নি। এ বিধান ওই অতিবৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জন্য, যারা সওম পালনে অক্ষম। এরা প্রতিদিনের সওমের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে পেট পুরে আহার করাবে।’
এখানে অক্ষম বলতে ওইসব ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যারা প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে একেবারেই অক্ষম এবং পুনরায় সুস্থ হয়ে বা সক্ষমতা ফিরে পেয়ে রোজা আদায় করার সম্ভাবনাও নেই।
ফিদিয়া কখন দিতে হয়:
ফিদিয়া দেয়ার সর্বোত্তম সময় হলো রমজানের প্রতিদিনই তা আদায় করা। একজন সাধারণ রোজাদার যেভাবে ইফতার–সেহরি ও খাবার গ্রহণ করে সেভাবে খাবার দান করা। অথবা রোজা শুরু হওয়ার আগেই হিসাব করে এক মাসের খাবার বা উল্লিখিত হিসাবে খাদ্যসামগ্রী বা তার সমপরিমাণ মূল্য পরিশোধ করা।
আর যদি ওই অসুস্থ ব্যক্তি ফিদিয়া আদায় না করে মারা যান, তাহলে তার পক্ষ থেকে আত্মীয়স্বজন ফিদিয়া আদায় করবে। কারণ, তখন মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ফিদিয়া আদায় করা আবশ্যক হয়ে যাবে। আর অসিয়ত না থাকলে ফিদিয়া আদায় করা মুস্তাহাব।
ফিদিয়া কাকে দেবে:
ফিদিয়ার হকদার হলো গরিব–মিসকিনরা। যারা জাকাত পাওয়ার যোগ্য তারাই ফিদিয়ার হকদার। এছাড়াও ফিদিয়া কোনো দ্বীনি প্রতিষ্ঠান, যেখানে জাকাতের হকদার আছে, সেখানেও দেয়া যাবে। (আল ইনায়াহ : ২/২৭৩)
দরিদ্রদের ফিদিয়া:
ফিদিয়া দেয়ার ক্ষেত্রে ধনী–গরিবের মধ্যে কোনো তারতম্য নেই। তবে দারিদ্র্যের কারণে যদি কেউ ফিদিয়া দিতে একেবারেই অক্ষম হয় তাহলে সে তওবা করবে। পরে কখনো সামর্থ্যবান হলে অবশ্যই ফিদিয়া আদায় করে নেবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৫/৪৫৫)
যূথী/ দীপ্ত সংবাদ