আফ্রিকার দেশ সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিহত ৬ বীর সদস্যের মরদেহ আগামী ২০ ডিসেম্বর (শনিবার) ঢাকা আনা হবে।
মাতৃভূমিতে ফেরার পর যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এই বীর সন্তানদের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হবে।
গত ১৩ ডিসেম্বর (শনিবার) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের (UNISFA) আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে এই বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। স্থানীয় সময় আনুমানিক দুপুর ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী সেনা ঘাঁটিতে আকস্মিক ড্রোন হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী।
এই হামলায় আরও ৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর।
শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ বহনকারী বিমানটি শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় উগান্ডার এন্টেব বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দিয়ে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করা ৬ শহীদ শান্তিরক্ষী হলেন:
১। কর্পোরাল মোঃ মাসুদ রানা
২। সৈনিক মোঃ মমিনুল ইসলাম
৩। সৈনিক শামীম রেজা
৪। সৈনিক শান্ত মন্ডল
৫। মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম
৬। লন্ড্রি কর্মচারী মোঃ সবুজ মিয়া
হামলায় আহত আরও ৮ জন শান্তিরক্ষী সদস্য উন্নত চিকিৎসার জন্য কেনিয়া রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তারা হলেন–
১। লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান, পিএসসি, অর্ডন্যান্স (কুষ্টিয়া)
২। সার্জেন্ট মোঃ মোস্তাকিম হোসেন
৩। কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি
৪। ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম
৫। সৈনিক মোঃ মেজবাউল কবির
৬। সৈনিক মোসাঃ উম্মে হানি আক্তার
৭। সৈনিক চুমকি আক্তার
৮। সৈনিক মোঃ মানাজির আহসান
আহতদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তার সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এছাড়া বাকিরা শঙ্কামুক্ত। এদের মধ্যে একজন চিকিৎসা শেষে ইতোমধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।
উল্লেখ্য, এই নৃশংস ও কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
শোকবার্তায় বলা হয়, শহীদ শান্তিরক্ষীদের এই আত্মত্যাগ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল ও গৌরবময় নিদর্শন হয়ে থাকবে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ জন সদস্য নিয়ে শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। তবে শান্তির এই পথ সবসময় মসৃণ ছিল না। এ পর্যন্ত জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন বীর সদস্য (সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ) বিশ্বশান্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
আকাশ/এসএ