সোমবার, মে ১২, ২০২৫
সোমবার, মে ১২, ২০২৫

চলচ্চিত্রের ইতিহাস !

আমরা যে চলচ্চিত্র দেখি তার সাড়ে তিনশত বছরের এক লম্বা ইতিহাস আছে। বিস্তারিত লিখেছেন আবদুল্লাহ মজনু

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

সিনেমা বা চলচ্চিত্রের সাথে ২১ দশকের তরুণ সমাজ কোন না কোন ভাবে জড়িয়ে আছে। প্রতিদিন হাজার হাজার বিষয় নিয়ে তৈরি হয় নতুন চলচ্চিত্র। পৃথিবী এখন ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে। যার উদ্দেশ্য সহজে তথ্য পৌছে দেওয়া।

অল্প সময়ে মানুষের পৌছে দেওয়া, মানুষ কে সচেতনতা করা, বিনোদন দেয়া, বা নতুন কোন তথ্য তুলে ধরা ইত্যাদি। আজকে আমরা যে চলচ্চিত্র দেখি তার সাড়ে তিন শতকব্যাপীর এক লম্বা ইতিহাস আছে। তার আগেও মানুষ যুগ যুগ ধরে চিত্র প্রদর্শন মধ্য দিয়ে খুজে নিয়েছে মানুষের চলচ্চিত্র উদ্দেশ্য। যেমন গুহাচিত্র, ধোয়াসংকেত, চীন ছায়া-নাটক, মধ্যযুগের ম্যাজিক -লন্ঠন ইত্যাদি। তবে ষোল শতকের শুরুর দিকে আধুনিক চলচ্চিত্র চেষ্টা করা হয়। ১৬৪০ সালে ধর্মযাজক এথেনেসিয়াস কারচরে ভক্তদের জন্য যীশুর জীবনীগ্রন্থ কে চলমান একটা রুপ দিতে চেষ্টা করে। এইটাই প্রথম সিনেমার সূত্রপাত।

নিওরিয়ালিজম

মূলত গ্রীক কিনেমা শব্দদ্বয় থেকে সিনেমা শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ গতি। নির্দিষ্ট বিষয়কে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য দেখানো হয় তাই অবিরত তত্ত্ব। এখানেই বিজ্ঞানের গতির সাথে সিনেমা গতির মিল পাওয়া যায়। ফরাসি দুই ভাই ওগুস্ত ও লুই লুমিয়ের ১৮৮৫ সালে ২৮ ডিসেম্বর এক মিনিটের চিত্রায়ণের মাধ্যমে আধুনিক সিনেমার যাত্রা শুরু করেন। যা মূলত স্থিরচিত্র দেখানো হতো। যেমন শ্রমিকরা বের হচ্ছে ঢুকছে কারখানায়, নৌকা ছেড়ে যাচ্ছে ইত্যাদি। তারপর সিনেমা জগতের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখান জর্জ মেলিয়া। ১৮৯৬ সালে মেলিয়া চলচ্চিত্রের জন্য কৃত্রিম সেট নিয়ে আসেন। তিনি পেশায় একজন যাদুকর ছিলেন। যাদুকরী কায়দায় ১৮৯৬ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত শ’পাচেক ছোট ছবি বানিয়ে ছিলেন। যা ছিল ট্রিক ফটোগ্রাফি, দৈত্য-দানো, কল্পকথা, ও ফ্যান্টাসি। জর্জ মেলিয়ের পর চলচ্চিত্রে প্রভাবশালী বিকাশ ঘটিয়েছেন এডুহন পোর্টার ও লুই ফ্যাইয়াদ(১৮৬৯-১৯৪৮)। পোর্টার চলচ্চিত্রে সম্পাদনা দিয়ে ভাঙলেন চলচ্চিত্র গণ্ডি আর ফ্যইয়াদ চলচ্চিত্রে যুক্ত করেন নাটকীয় ও আবেগ।

সিনেমার গল্প অনুযায়ী বানিয়ে ছিলেন সুপরিকল্পিত শুটিং সেট। প্রকাশ ঘটান সেটের নানা ব্যবহার ও কৌশল। এখান থেকেই পরিবর্তন হয় স্থিরসিনেমা বা ট্রিক ফটোগ্রাফি। চলচ্চিত্রে যুগান্তকারী আবিষ্কার ছিল দুইটা শর্টকে একত্র করন। তবে নাটকীয়তা ও ঘটনার গতি প্রবাহ থাকায় সময় এবং আয়াতনের বাধন ভেঙে যায়। যা নন্দনতত্ত্বের বিকাশের একবড় অগ্রযাত্রা। অভিনয় করতে এসে পরিচালক হয়ে গেছেন, এমন সফল পরিচালকদের গল্প প্রায়ই শোনা যায়। তেমনি ১৮ শতকে অভিনয় করতে এসে নামকরা পরিচালক বনে যান ডি.ডাব্লিউ. গ্রিফিথ। তিনি ১৮৭৫ -১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সল্পদৈর্ঘ্য (১৫মিনিট) চারশো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। তার হাত ধরেই চলচ্চিত্র দিয়ে মানুষের প্রতি মানুষের অসহিষ্ণুতা ঘৃনা, তা থেকে উৎসারিত, সংহিংসতা প্রকাশ পায়। চলচ্চিত্রে ভাষাকে নান্দনিক ও কারিগরিক উভয় দিক থেকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার মধ্য ছিল ক্যামেরার হাই ও লো এঙ্গেল শর্ট, ক্যামেরাকে আগ- পিছ করে শর্ট, লংশর্ট ও ক্লোজ শর্ট, ক্রিয়েটিভ এডিটিং। এইগুলো গ্রাফিথ হাত ধরে চলচ্চিত্রের জগতে স্থান পায়। জন্ম নিল এক জটিল ও সর্বাধুনিক চলচ্চিত্র শিল্প। ১৯ শতকের শুরু দিকে চলচ্চিত্রের গুরুত্ব ও মর্তবা খুজে পায় ফরাসি, আমেরিকান ও সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক নেতারা। তারপর থেকে চলচ্চিত্র ব্যবহার করেছেন মতাদর্শ প্রচারণায়, যুদ্ধে উস্কানিতে, প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে দিতে, যুদ্ধবিরোধী জনমত গড়ে তুলতে, মানবিকের ও সামাজিক মূল্যবোধ তৈরি করতে। সর্বশেষ কথা সময়ের দাবি অনুযায়ী চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন জার্মান এক্সপ্রেশন, ইন্টেলেকচুয়াল মন্তাজ, সুরয়িয়ালিজম, নিওরিয়ালিজম, ফরাসি নিউ ওয়েভ, ব্রিটেন ফ্রি সিনেমা মুভমেন্ট, হলিউড, প্রমাণ্যচিত্র ইত্যাদি। ১৯ শতকে চলচ্চিত্র বিকাশে বড় একটি অংশ রাজনৈতিক ঘটনা জড়িত।

১৯১৭ সালে রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব। এরপর লেলিনের স্বাধীন চলচ্চিত্র ঘোষণায় সোভিয়েত ইউনিয়নে চলচ্চিত্রে গুনগত পরিবর্তন পায়। তখনই একঝাক পুদোভকিন, কুলেশভ, দভেঝেঙ্কে কিম্বা জিগা ভর্তেরর মতো প্রতিভাবান পরিচালক বেড়িয়ে আসে। পরিচালকরা তাদের সৃজনশীলতা দিয়ে সোভিয়েত শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট ও বিপ্লবগাথা চিত্র তুলে ধরা হয়। তাতেই ঘটল চলচ্চিত্রের ভাষা ও নন্দনতত্ত্বের বেশ কিছু পরিবর্তন। স্তলিনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ও সেন্সরের বাধা কারনে থেকে যায় সোভিয়েত চলচ্চিত্র সৃজনশীলতা কিন্তু গোটা বিশ্বে চলচ্চিতত্রের বিশ্বে গুনগত মান পরিবর্তন হয়ে যায়। বিশ দশকে জার্মানিতে এক ধরনের ছবি দেখা যায়। যার নির্মান কৌশল ও বক্তব্য ধরনে চলচ্চিত্র মাঝে বেশ প্রভাব পড়েছিল। এই তত্ত্বের নাম জার্মান এক্সপ্রেনিজম সিনেমা নামে পরিচিত পায়। যা জার্মানির ততকালীন সমস্যাকুল এবং অস্থির সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন ফুটে উঠেছে। কারন বিশ দশকে জার্মানি দুই বিশ্ব যুদ্ধে পরাজিত ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যবোধ বিধস্ত দেশ ছিল।যেখানে শুধু টিকে থাকে সামাজিক চলচ্চিত্র ও প্রতিক্রিয়াশীল সব ধ্যানধারণা। যেখানে মানুষের মনে চিন্তাভাবনা ও মনোজগত উপর ফোকাস রাখা হয়েছে।

জার্মান এক্সপ্রেশনের বিখ্যাত সিনেমা ড.ক্যালিগরই(১৯২০) ড.মাবুজ (১৯২২) মেট্রোপলিসি (১৯২৭) ফিউর (১৯৩৬) দি লাস্ট লাফ(১৯২৭) জার্মান মেকানিক্স অব ব্রেন(১৯২৪) সিক্রেট অব এ সোল (১৯২৬) ইত্যাদি। জার্মান এক্সপ্রেশন সিনেমা পুর একদশক টিকে ছিল। তবে প্রত্যেক দশকের নন্দনতত্ত্ব সাথে পরবর্তী দশকের চলচ্চিত্র প্রভাবিত করেছে। সেই ধারায় আবিস্কার হয় নতুন নন্দনতত্ত্ব। সুররিয়ালিজিম অভা গার্দ নামে ফ্রান্সে ১৯২৪ সালে নতুন একধরনের চলচ্চিত্র দেখা যায়।ফ্রান্স তখন বিভিন্ন দেশের শরনার্থী বুদ্ধিজীবীদের ভীড়। যা ফ্রান্সে আসা বুদ্ধিজীবী, শিল্পী ও সাহিত্যকারদের আসরে বিশ্ব নাগরিক মনোভাব তৈরি হয়। যার ফলস্বরূপ নতুন ধরনের চলচ্চিত্রতত্ত্ব সৃষ্টির জোর আলাপ হয়। সেখান থেকেই আভা গার্দ জন্ম। এটি অবশ্য সুনির্দিষ্ট সামাজিক পরিবেশের ফসল। যা বিশেষ সময় কালের সামাজিক ও শৈল্পিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যা মূলত দর্শকের বাস্তববোধ কে প্রচন্ডভাবে ধাক্কা দেওয়া হয়। অনবদ্য সব শিল্পের মাধ্যমে প্রকৃতি, হতভাগিনী মানুষের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ-বেদনা, ভীতি, আতঙ্ক ফুটে তোলা হয়েছে।

আভা গার্দ চলচ্চিত্র বস্তুজগৎ থেকে মনোজগৎ মূর্ত থেকে বিমূর্তে চলে যাওয়ার যে শৈল্পিক সুযোগ চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে। মানব মনের নানা অবচেতন অনুভূতি, যৌনতা মনো বস্তবতাকে বিভিন্ন প্রতীকের মধ্যমে তুলে ধরা যায় প্রকাশ পেয়েছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার সমর্থনে এগিয়ে আসে ইতালি। তখন ক্ষমতার মসনদে মুসলিন। ইতালিকে ফ্যাসিবাদ দিয়ে অক্টোপাসের আষ্টেপৃষ্ঠে জেকে ধরে ছিল। নতুন ধরনের চলচ্চিত্র বেড়িয়ে আসে। যার নাম নিওরিয়ালিজম। এই শব্দটির স্রষ্টা আলবার্তো। এই চলচ্চিত্র দ্বারা প্রকাশ পায় যুদ্ধো বিরোধী ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গী, মানাবিক সততা, পরস্পরের উপর সহর্মমীতা ও সর্বোপরি মানবিক অনুভূতি সমূহ। যা দেখিয়েছে বৈরি সমাজ ও সময়ের বিরুদ্ধে টিকে থাকার গল্প। এই নন্দনতত্ত্বের কাল ছিল ১৯৪২ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত। একদেশের সিনেমা দ্বারা অন্য দেশ প্রভাবিত হবে এইটা চলচ্চিত্রের কথা এই আর নতুন কথা কি!? তবে নিওরিয়ালিজম ফরাসি সংস্করণ হল নিউ ওয়েব বা কোলাজ সিনেমা। অবশ্য তবে নুভেল ভাল নামে বেশি পরিচিত।

যা ১৯৫৯-৬০ সালের পরবর্তী দশক পর্যন্ত ফ্রান্সে একদল তরুন পরিচালকগন নিউ ওয়েভ সিনেমা নির্মাণ শুরু করে। ক্রুফাও, গদার শ্যাব্রল আস্ক্রুক, লুইমালা এলা রেন’রা হাতে কলমে নুভেল ভাল পরিচিতি পায়। যেখানে আউটডোর শুটিং, হাতে ধরা ক্যামেরা, অপেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে অত্যন্ত সল্পব্যয়ে নির্মাণের কৌশলের কারনে নিউ ওয়েভ ফ্রান্সসহ গোটা চলচ্চিত্র বিশ্বে সাড়া ফেলে। এর মূল স্লোগানে ছিল কলমের মতো ক্যামেরাকেও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে হবে একজন চলচ্চিত্রকার কে। নিউ ওয়েভ চরিত্রে থাকে একদল মানুষ। যারা পরস্পরের মাঝে জীবন অর্থ খুজে পায়। যা ষাট দশকে নতুন মূল্যবোধ জন্ম নেয়। নতুন চলচ্চিত্র যুগের ইঙ্গিত দেয়। চরিত্রের দেখানো হয় নারী প্রকৃত যৌন স্বাধীনতা, পরিনতি বয়সে বিচ্ছিন্ন একদল একক নারী ও পুরুষ। যারা পরস্পরে প্রেমের মাঝে জীবনের অর্থ খুজে পেতে চায়। নারীর নিওরিয়ালিজম দ্বারা নুভেল ভাগ প্রভাবিত।

আবার নুভেল ভাগ দ্বারা ইউরোপসহ তৃতীয় দেশের তরুন পরিচালকেরা কম বেশি প্রভাবিত হয়েছেন। এই ধারায় প্রভাবিত ব্রিটেনের তরুন পরিচালকরা। চালু হয় ব্রিটেনের যৌন নৈতিকতা বা ফ্রি মুভমেন্ট বা ফ্রি সিনেমা মুভমেন্ট। যা পঞ্চাশের দশকের দ্বিতীয়য়ার্ধ থেকে ষাট দশক পর্যন্ত নতুন চলচ্চিত্র পাওয়া যায়। মূলত ওই সময়কালে সমাজ বাস্তবতা ও যৌন নৈতিকতার বিষয়গুলোকে কাহিনী চিত্রে সাথে প্রামান্যচিত্রের মিশ্রনটা ঘটানো হায় সফলভাবে। যার সামাজিক ও নৈতিক মাপকাঠি গ্রহনের বিচার ভার ছেড়ে দেন দর্শকদের উপর। বিশ দশকের এক্সপ্রেনিজম প্রভাব পরিবর্তন হয়। ষাট ও সওর দশকে যা নতুন জোয়ার তৈরি করে চলচ্চিত্র জগতে। জার্মান এক্সপ্রেশন চলচ্চিত্র তত্ত্ব দ্বারা জার্মান প্রভাবিত হলেও ১৯৬২ সালে নতুন ধারার নামে নয়া জার্মান সিনেমা চালু হয়।

 

 

সময়ের দাবী অনুসারে নয়া জার্মান সিনেমা প্রতিভাবান চলচ্চিত্রকার উপহার দিয়েছেন শ্লনডর্ফ ওয়ানিরে হারজগ, এডগার রাইজ। ১৯৬২ সালে জার্মানির পুরানো চলচ্চিত্র মৃত্য ঘোষণা দিয়ে নতুন চলচ্চিত্র সৃষ্টি করেন। ঐতিহাসিক ঘোষনাটি ‘ওবার ইউজেন’ নামে পরিচিতি তাদের হাত ধরে টেলিভিশনের ও চলচ্চিত্রে জগতের মেলবন্ধন হয়। এই ঐতিহাসিক মেল বন্ধনকে বলা চলে “রাইজের” ও “হাইমেট” ছবি দিয়ে শুরু হয় দেশ ভিত্তিক সিনেমা মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানিক যাত্রা। সিনেমা দিয়ে ধাবিত হওয়া জায়গা তৈরি করা হয়। সেই মূল ধারায় চলচ্চিত্র কোম্পানি

 

 

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More