টাকার ব্যাগ হারিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে অসহায় অবস্থায় পড়েন এক দম্পতি। তাঁদের দুজনেরই বয়স ২৫–এর কম। তাঁদের অসহায়ত্ব দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া। দুজনকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যান উত্তরখানে তাঁর ভাড়া বাসায়।
ওই বাড়িতেই থাকতেন দম্পতি। স্বামীকে নানা অজুহাতে বাইরে পাঠিয়ে তাঁর স্ত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেন সাইফুর রহমান। গত সোমবার রাতে তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তাঁর স্বামী প্রতিবাদ করেন, দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান দম্পতি। গতকাল মঙ্গলবার ফরিদপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার দম্পতি হলেন—মো. নাজিম হোসেন (২১) ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতি (২৩)। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি চাবির রিং ও একটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়। এর আগে নিহতের ফ্ল্যাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি বটি, একটি চাকু ও রক্তমাখা জামা–কাপড় এবং বিছানার চাদর উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ–পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া উত্তরখান থানার পুরানপাড়া বাতান এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে খুন হন। গত সোমবার রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় গত ১১ মার্চ হত্যা মামলা করেন।
মামলার এজাহারে সাইফুরের ভাই উল্লেখ করেন, সাইফুর উত্তরখানের পুরানপাড়া বাতান এলাকায় স্ত্রীর পৈতৃক আড়াই শতক সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণাধীন থাকায় ৩–৪ মাস ধরে কাছেই একটি ভাড়া বাসায় থাকছিলেন।
গ্রেপ্তার দম্পতিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে উত্তরার ডিসি মহিদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনার দু–তিন দিন আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে সাইফুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত মো. নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতি দম্পতির পরিচয় হয়। সাইফুর দম্পতিকে তাঁর ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে সাইফুর রহমান রুপাকে ফ্ল্যাটে রেখে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডের রাতে এক ঘরেই ছিলেন সাইফুর রহমান এবং ওই দম্পতি। নাজিম ঘুমিয়ে পড়লে সাইফুর রহমান রুপাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নাজিমের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি রান্নাঘর থেকে বটি এনে সাইফুর রহমানকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই সাইফুরের মৃত্যু হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দম্পতি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সাইফুর রহমানের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর কোনো বিরোধ ছিল কিনা জানতে চাইলে উত্তরা বিভাগের ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘থাকতে পারে। তদন্তের জন্য তাঁর স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে সে ধরনের কোনো তথ্য আমরা পাইনি।’
আল