ওষুধ, রেস্তোরাঁ ও মোবাইল সেবাসহ বেশ কিছু পণ্য–সেবায় আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) এ বিষয়ে ৪টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে এনবিআর জনসংযোগ কর্মকর্তা আল–আমিন শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের নিজস্ব আর্থিক ভিত মজবুত করার লক্ষ্যে গত ৯ জানুয়ারি সরকার ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫‘ ও ‘The Excises and Salt Act (Amendment) Ordinance, 2025’ অধ্যাদেশ জারি করেছে। একই উদ্দেশ্যে কতিপয় পণ্য ও সেবার ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক এবং আবগারি শুল্কের হার পুনঃনির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতিপয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
পরবর্তীতে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সুশীল সমাজ এবং অংশীজনের অনুরোধ বিবেচনা করে বৃহত্তর জনস্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতিপয় পণ্য ও সেবায় বিদ্যমান ভ্যাটের হার, উৎসে ভ্যাট কর্তনের হার ও সম্পূরক শুল্কের হার হ্রাস করে ৪টি নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
যেসব খাতে পরিবর্তন করা হয়েছে ভ্যাট হার–
মোবাইল ফোন ও আইএসপি সেবা
মুঠোফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিফোন সেবায় (টক টাইম, ইন্টারনেট ব্যবহার ইত্যাদি) সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছিল। এই সম্পূরক শুল্ক হার এখন আগের জায়গায় ফেরত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট সংস্থার (আইএসপি) সেবার ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রেস্তোরাঁ বিল
আগের মতোই রেস্তোরাঁর খাবারের বিলের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হবে। রেস্তোরাঁর খাবারের বিলের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল নতুন অধ্যাদেশে। এখন বাড়তি ভ্যাট হার প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পোশাক, মিষ্টি ও অন্যান্য
রেস্তোরাঁর মতো তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রেও ভ্যাট কমানো হয়েছে। নিজস্ব ব্র্যান্ডের পোশাক ব্যতীত অন্যান্য পোশাক বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট হার করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। নতুন করে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের আগে এ হার সাড়ে ৭ শতাংশই ছিল। ৯ জানুয়ারি যা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল। এখন বাড়তি সেই হার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে বাড়তি ভ্যাট থাকছে ব্র্যান্ডের পোশাকের ক্ষেত্রে। এ হার করা হয়েছে ১০ শতাংশ। ৯ জানুয়ারির আগে তা ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ।
মিষ্টির দোকানেরও ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ৯ জানুয়ারির আগে মিষ্টির দোকানে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছিল। ফলে মিষ্টির দোকানে ভ্যাট হার বাড়ল আড়াই শতাংশ।
এ ছাড়া নন–এসি হোটেলের ওপর ভ্যাট হার ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপের ভ্যাটেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখানেও ১০ শতাংশ ভ্যাট করা হয়েছে।
ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাটের হার ২ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছিল। এখন বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এতে ওষুধের দাম বাড়বে না বলে মনে করে এনবিআর।
উল্লেখ্য, সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে ভ্যাট বাড়ানোর দুই সপ্তাহের মধ্যে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে পিছু হঠল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
প্রসঙ্গত, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে ৯ জানুয়ারি এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়।
এসএ