ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের লেজুড়বৃত্তির অভিযোগে অনেক আগে থেকেই পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর থেকে এ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। জুলাই গণ–অভ্যূত্থানে ছাত্র–জনতা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ বাহিনীর ভেতরেও আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের নাম ও পোশাক পরিবর্তের বিষয়টি চাউর হয়।
সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পোশাক পরিবর্তন বিষয়টি জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী৷
পরিবর্তিত পুলিশের জন্য আয়রন রঙের পোশাক, র্যাবের জন্য সবুজ জলপাই ও আনসারের জন্য সোনালী গম রঙের পোশাক নির্বাচন করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা পুলিশ, র্যাব ও আনসারদের জন্য তিনটি নতুন পোশাক নির্ধারণ করেছি। এসব পোশাক পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করা হবে। পুরোনো পোশাক আস্তে আস্তে বদলে ফেলা হবে।
পোশাক পরিবর্তনের কারণ হিসেবে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এসব সদস্যদের মানসিকতার পরিবর্তন করতেই পোশাকের পরিবর্তন করা হচ্ছে। মনোবল বৃদ্ধি ও দুর্নীতিরোধসহ নানা বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
যতবার পুলিশের পোশাক পরিবর্তন
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাতদিন থানায় পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকায় কাজে ফেরেনি তারা। এসময় তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের দাবিও উত্থাপন করা হয়। তবে পুলিশের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল, তা হলো— পুলিশের পোশাক পরিবর্তন। সংস্কার কমিশনও এ দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের প্রাথমিক সুপারিশ করেছে।
খাকি রং দিয়ে শুরু-
এই অঞ্চলে যখন ব্রিটিশ শাসিত ছিল তখনই পুলিশ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, তবে প্রথম দিকে কোনো নির্ধারিত পোশাক ছিল না। কিছু সময় পর তাদের জন্য ‘সাদা পোশাক‘ করা হয়। কিন্তু পোশাক নিয়েও একটা সমস্যা দেখা দেয়। পুলিশ সদস্যদের সাদা ইউনিফর্ম ডিউটি করার সময় অল্প সময়ের মধ্যে নোংরা হয়ে যেত।
পরে ১৮৪৭ সালে ব্রিটিশ অফিসার স্যার হ্যারি লুমসডেনের পরামর্শে, পুলিশের ইউনিফর্মটি হালকা হলুদ এবং বাদামি রঙে রাঙানো হয়েছিল। তারপর চা পাতা, পানি ব্যবহার করে সুতির কাপড়ের রং রঞ্জকের মতো তৈরি করে ইউনিফর্মের ওপর লাগানো হতো। যার ফলে পোশাকের রং খাকি হয়ে যায়। সেই বছরই পুলিশে ‘খাকি রঙের‘ পোশাক গৃহীত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বাঙালি পুলিশ সদস্যরা খাকি রঙের পোশাক ব্যবহার করেন। অনেকে অবশ্য ‘সাদা পোশাকেও’ লড়াই করেছেন পাক সেনাদের বিরুদ্ধে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২০০৪ সালে পুলিশের পোশাকে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে। সেই বছর পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করে মহানগরগুলোয় ‘হালকা জলপাই‘ রঙের করা হয়। জেলা পুলিশকে দেওয়া হয় ‘গাঢ় নীল‘ রঙের পোশাক। র্যাবের ‘কালো‘ ও এপিবিএন সদস্যদের পোশাক তৈরি করা হয় ‘খাকি, বেগুনি আর নীল‘ রঙের মিশ্রণে।
এরপর ২০২০ সাল থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাকের ট্রায়ালও হয়। তারপরও নানা কারণে নতুন পোশাক পায়নি বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালে বাংলাদশে রাইফেলসের (বিডিআর) নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সেই সময় বাহিনীর মনোগ্রাম এবং পোশাকেও পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
সুমাইয়া আক্তার