শনিবার, এপ্রিল ১২, ২০২৫
শনিবার, এপ্রিল ১২, ২০২৫

৫৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী খানজাহান আলী মাজারের চৈত্র সংক্রান্তি মেলা

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

বাগেরহাটে ঐতিহ্যবাহী খানজাহান আলী (রহ) এর মাজারে তিন দিনব্যাপী চৈত্র সংক্রান্তি মেলা শুরু হতে আর মাত্র এক দিন বাকী। এই মেলাকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন চলছে নানা আয়োজন, অন্যদিকে মেলায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার নারীপুরুষ ভিড় করছেন মেলা প্রাঙ্গণে।

জানা যায়, গত সাড়ে পাঁচশ বছর ধরে চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে নিয়মিত এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগামী রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা শুরু হবে। তিন দিনব্যাপি এই মেলা আগামী ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শেষ হবে।

স্থানীয়রা জানান, মেলা ভেঙে গেলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষ মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যেতে কমপক্ষে সাত দিন সময় নেন।

এদিকে মেলা প্রাঙ্গণে চলছে ব্যাপক আয়োজন। দরগার বিশাল মাঠে বসবে একশ দোকান। সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, যশোর, নড়াইল, রাজশাহী, পাবনা, ঢাকা থেকে পসরা নিয়ে আসবেন ব্যবসায়ীরা। ঘর সাজানোর হরেক রকম সরঞ্জাম, আধুনিক ডিজাইনের ফাণিচার, তৈজসপত্র, খেলনা, গৃহের পণ্য যেমন, তালের হাত পাখা, মাটির থালা, পুতুল ইত্যাদি। ফ্যাশন জুয়েলারি, কাঁচের চুড়ি, নানারকম পোশাক, মিষ্টিসহ নানা রকম খাবার দোকানও থাকবে এ মেলায়। এছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা। দরগার দিঘিতে পুণ্য স্নান, কুমির প্রদর্শনী, শিশুদের বিনোদনে নাগরদোলা, ঘোড়া, টয় ট্রেনসহ রয়েছে নানা আয়োজন। সর্বোপরি দর্শনার্থীদের কাছে মেলাটি উপভোগ্য করে তুলতে ব্যস্ত আয়োজকরা।

সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো নারী পুরুষ আজ শুক্রবার থেকেই মাজারে জড়ো হতে শুরু করেছে। এসব ভক্তরা তিনদিন মাজারে অবস্থান করবেন। অনেকেই নিজের মনোবাসনা পূরণের আশায় স্রষ্টার আরাধনায় মগ্ন থাকবেন। লালন, মুর্শিদী ও ভাটিয়ালী গান পরিবেশন করবেন আরেক দল ভক্ত। রাতভর লোকে লোকারণ্য থাকবে মাজার প্রাঙ্গণ। আগত ভক্তদের বিশ্বাস এখানে এসে দোয়া করলে যে কোনো সমস্যার সমাধান মেলে। আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের খরচেই রান্না হবে খিচুড়ি, তেহারি ও বিরিয়ানি। এতিম, মিসকিন, অসহায় ও দুস্থদের মুখে খাবার তুলে দেবেন ভক্তরা।

ভোলা থেকে আগত অ্যাডভোকেট শাহীন বলেন, খানজাহানের মেলা উপলক্ষে আমরা আমাদের মান্নত পালন করতে এসেছি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে। আগামী তিনদিন আমরা এখানে থাকব।

বরিশাল থেকে আগত কলেজ শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, ঐতিহ্যবাহী খান জাহানের মেলা দেখার জন্য প্রতিবছর আমি এ মেলাতে আসি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এ মেলা খুবই জনপ্রিয়। গত দুবছর রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই এ বছর মেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে বেশ ভালো লাগছে।

মাজারের প্রধান খাদেম ফকির তারেক বলেন, প্রতি বছর চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এ মেলা বসে। সাড়ে ৫০০ বছর ধরে এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মেলা খানজাহানের মৃত্যু বা জন্ম দিনে হয় না। এখানে চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভক্তরা এসে জড়ো হতো। যেটা পরবর্তীতে মেলায় রূপ নেয়।

কাড়াপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সৈয়দ নাসির আহমেদ মালেক বলেন, খানজাহানের হাজার হাজার ভক্ত তাদের নানা মনোবাসনা নিয়ে এখানে হাজির হন। তারা বিশ্বাস করেন খানজাহান এখানে কাউকে খালি হাতে ফেরান না। তাদের সব আশা পূরণ করেন খানজাহান। তাই হিন্দুমুসলিমবৌদ্ধখৃষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষ এ সময় হজরত খানজাহানের মাজারে মিলিত হন। মেলা চলাকালে এটি পরিণত হয় লাখো মানুষের মিলন মেলায়।

সাবেক চেয়ারম্যান ডাক্তার হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী জানান, তিন দিনব্যাপী মেলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে। দর্শনার্থী ও মেলায় আগত দোকানিদের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় তরুণরা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করবেন।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ জানান, আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বাগেরহাট থানা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। মাজার সংলগ্ন হাইওয়ে সড়কে বারো মাসই পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়। আর মেলা উপলক্ষে চব্বিশ ঘণ্টা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

বাগেরহাট সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদউলহাসান বলেন, কেউ কোন সমস্যায় পড়লে আমাদের ফোন দিলেই পুলিশ সদস্যরা সেখানে পৌঁছে যাবে।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More