শরীরে মাছি আর পোকা পড়েছে। রোদে পুড়ছিল, আর বৃষ্টিতে ভিজে হাসপাতাল প্রবেশ পথের এক কোণে মাটিতে পড়েছিল ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা। কিছুক্ষণ পরপর গোঙাচ্ছিলেন। শরীর প্রায় নিস্তেজ।
বৃদ্ধার গোঙানির শব্দ শুনতে পেয়ে ডাঃ মো: মকছেদুল মোমিন তাকে চিকিৎসার জন্য মাটি থেকে তুলে নিয়ে আসেন হাসপাতালের বারান্দায়। বৃদ্ধার চোখে পানি ছিটানো হয়। তখন বৃদ্ধা ধীরে ধীরে তাকানোর চেষ্টা করেন। তবে কিছু বলতে পারছিলেন না। পরে তার মাথার জটা চুল কেটে দেন। পড়ানো হয় নতুন কাপড়। শুরু হয়েছে তার চিকিৎসা।
এভাবে শনিবার (৮ জুলাই) দুপুর থেকে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যাশায়ী অজ্ঞাতনামা এই বৃদ্ধা।
সেখানে সেবা ও চিকিৎসা দিয়ে তাকে আগলে রেখেছেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডাঃ মো: মকসেদুল মোমিন। অজ্ঞাত বৃদ্ধা নারীকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়ে চিকাৎসা দেওয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রশংসায় ভাসছেন এই মানবিক ডাক্তার।
নাম–পরিচয় কিছুই জানেন না অজ্ঞাত ওই বৃদ্ধা। তিনি কথাও বলতে পারে না। মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (৯ জুলাই) সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে বৃদ্ধাকে শয্যায় নিস্তেজ অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। ভর্তির রেজিস্ট্রারে ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয়, সেগুলো খেয়েই থাকছেন। তবে সব খাবারও খেতে পারছেন না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
হাসপাতালের নার্সিং সুপার কীরণ বালা সরকার বলেন, তার ডিউটির সময় তিনি বৃদ্ধার সেবা করেন। তিনি কথা বলতে পারেন না। এজন্য তার সঠিক পরিচর্যাতে সমস্যা হচ্ছে। স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছেন না। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডাঃ মো: মকসেদুল মোমিন বলেন, অজ্ঞাতনামা ওই বৃদ্ধার কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। পাশাপাশি জন্ডিস ও লেভারসহ নানা রোগে ভুগছেন। যতটুকু সম্ভব আমরা চিকাৎসা চালিয়ে নিচ্ছি। এমন সময় তার ভালো সেবার দরকার। তবে কোনো অভিভাবক না থাকায় সম্ভব হচ্ছে না।
শ্রাবণ/আফ/দীপ্ত নিউজ