বিজ্ঞাপন
রবিবার, এপ্রিল ৬, ২০২৫
রবিবার, এপ্রিল ৬, ২০২৫

সূর্যমুখী চাষে বদলে যাচ্ছে উপকূলের চিত্র

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে উপকূলজুড়ে বাড়ছে লবণাক্ততা, ডুবে যাচ্ছে ফসলি জমি। আমন ধান কাটার পর বছরের বাকি সময়টায় পতিত পড়ে থাকত এসব জমি। তবে সেই দৃশ্যপট বদলাচ্ছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার উপকূলে পাঁচ হাজার বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ, একদিকে যেমন কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে, তেমনি তৈরি করছে কৃষি অভিযোজনের এক অনন্য উদাহরণ।

বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের ফসলি জমিতে। ফলস্বরূপ, কৃষিকাজে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, মাটির উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস এবং কৃষকের আর্থিক অনিশ্চয়তা যুক্ত হয়ে তৈরি করছে একটি নীরব দুর্যোগ।

এমন প্রেক্ষাপটে ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির আওতায় কলাপাড়ায় চালু হয় ‘ব্র্যাক এডাপটেশন ক্লিনিক’, এই কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের হাতে তুলে দেয়া হয় লবণসহিষ্ণু সূর্যমুখীর জাত—হাইসান৩৩। এই জাতের সূর্যমুখী বাম্পার ফলন দিয়েছে। ব্র্যাক শুধু বীজই দেয়নি; দিয়েছে সার, বালাই ব্যবস্থাপনা, চাষের কৌশল এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণও।

ফলাফল হিসেবে দেখা গেছে, কলাপাড়ায় প্রায় ৫,০০০ বিঘা জমিতে আনুমানিক এক হাজার ৮০০ টন সূর্যমুখী উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ থেকে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার লিটার সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করা সম্ভব, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন, নগর উন্নয়ন ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, “লবণাক্ততার কারণে কলাপাড়ার অনেক জমিই পতিত ছিল। আমরা কৃষকদের সঙ্গে কাজ করে দেখিয়েছি, কীভাবে অভিযোজন সম্ভব। এখন কৃষকরা নিজেরাই সূর্যমুখী থেকে তেল উৎপাদন করে বিক্রি করছেন।”

সাধারণত সূর্যমুখীর বীজ বিক্রি করে কৃষক আয় করে থাকেন। তবে কলাপাড়ার চাষিরা এখন নিজেরাই তেল উৎপাদন করছেন, ব্র্যাক তাদের তেল ভাঙানোর মেশিন ও খোসা ছাড়ানোর যন্ত্র দিয়েছে। উৎপাদিত সূর্যমুখী তেল বাজারে ২৫০ টাকা প্রতি লিটারে বিক্রি হচ্ছে, যা শহরের সয়াবিন বা সরিষার চেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত ও কোলেস্টেরলমুক্ত।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্যমুখী একটি জলবায়ুসহনশীল ফসল। এটি লবণাক্ত মাটিতে অনায়াসে বেড়ে ওঠে, পানির প্রয়োজন কম, এবং এর চাষে রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজনও তুলনামূলকভাবে কম। ফলে কৃষকের খরচও কমে আসে। পাশাপাশি এটি একটি তেলবীজ ফসল, ফলে খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতেও ভূমিকা রাখছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিতে সূর্যমুখী চাষ শুধু একটি বিকল্প নয়, বরং একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার। এটি কৃষককে দিয়েছে আত্মবিশ্বাস, দিয়েছে নতুন আয়ের পথ।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More