শহুরে কোনো আয়োজন নয়, শহর থেকে দূরে গিয়ে প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলে পলি ব্যবস্থাপনা, মাছ চাষ, বৃক্ষরোপণ ও কমিউনিটি ট্যুরিজমকে উৎসাহিত করতে রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী ‘হাওর উৎসব’।
জেলার দিরাই উপজেলার কালনী নদীর তীরের উজানধল গ্রামের মাঠে বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে এই উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর। উজানধল গ্রামে জন্মেছেন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম। হাওরের সাতটি জেলার ৪৯টি উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার এক হাজার ২০০ মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন।
উৎসবে আলোচনা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, অডিও–ভিডিও প্রদর্শনী, মাছ চাষ, বৃক্ষরোপণ, গাছের চারা বিতরণ, গম্ভীরা পরিবেশন, হাওরাঞ্চলের মরমি সাধক ও বাউলদের জনপ্রিয় গানের পরিবেশনায় ভাটির গানের আসর ও প্রীতি ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুরে ‘পলি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশের প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) আবু সেলিম মাহমুদুল হাসান, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ. ফ. ম. আনোয়ার হোসেন খান। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সনজীব সরকার।
বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, ‘হাওরাঞ্চলে পলি বড় সমস্যা। প্রতিবছর উজান থেকে এক বিলিয়ন টন পাথর, নুড়ি, বালু নেমে আসে, যা হাওর, নদী, খাল ও জলাভূমি ভরাট করছে। এই পলি ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে ৫০ বছর পর বাংলাদেশ মরুভূমি হয়ে যাবে।’
বক্তারা বলেন, হাওর ও জলাভূমি বাংলাদেশের সমৃদ্ধির প্রতীক। হাওরে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নে সচেতনতা বাড়াতে হবে। হাওর পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে, তবে তা অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়। এরপর শুরু হয় সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, যেখানে ২–০ গোলে বিজয়ী হয় ময়মনসিংহ।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ভাটি বাংলার গান। গান পরিবেশন করেন বাউল রণেশ ঠাকুর, বাউল শাহীনুর আলম সরকার, বাউল শাহ আবদুল করিমের সন্তান নূর জালাল, বাউল হারুন মিয়া, বাউল সিরাজ উদ্দিন, জুই ঠাকুর। বাদ্যযন্ত্রে ছিলেন শৈলেন দাশ (ঢোল), শফিক উদ্দিন (হারমোনিয়াম), হরিপদ (বেহালা), রিপন আলী (দোতারা), শান্ত রায় (বাঁশি), তৈমুছ আলী (মন্দিরা) এবং জেন্টু শাহ (খমক)। অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল ইস্টিশন কমিউনিকেশনস।