সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে এক বিচারাধীন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাত ১০টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মমতাজ মজিদ।
মৃতের নাম মনিরুল ইসলাম (৪৫)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের রইচউদ্দিনের ছেলে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের মনোয়ারা খাতুন জানান, তার স্বামী মনিরুল ইসলাম ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঝাউডাঙা বাজার থেকে ৫০ লিটার চোলাই মদসহ আটক করে র্যাব। এ ঘটনায় পরদিন সদর থানায় মাদক আইনে মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মনোয়ারা খাতুন আরো জানান, শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে তার বড় ছেলে রিপনের কাছে জেলখানা থেকে মোবাইল করে পিসি কার্ডে লক লাগিয়ে দিতে বলে। এ সময় তার কোন শারীরিক অসুস্থতা ছিল বলে ছেলেকে জানাইনি মনিরুল।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে তিনি জেলগেটে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে যান। টিকিট করার পর তিনি তার এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন যে স্বামী মারা গেছে। তার স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারে কারাকর্তৃপক্ষ তাকে অবহিত করেনি। এমনকি সদর হাসপাতালে স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারে কোন রেকর্ড নেই।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মমতাজ মজিদ তাকে জানিয়েছেন, যে শুক্রবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে হাজতী আসামীকে (হাজতী নং ৮৫৭/২) হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে এলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা পরেও তাদেরকে খবর দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। তাই এ মৃত্যুকে তারা স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে করেন না মনোয়ারা খাতুন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. ফরহাদ হোসেন জানান, গত ২৩ মার্চ মনিরুলের জামিন না’মঞ্জুর করেন জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোঃ আব্দুল আলিম আল রাজী। হাইকোর্টে পাঠানোর জন্য মামলার সত্যায়িত কাগজপত্র তোলার প্রস্তুতি চলছিল।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মোঃ মমতাজ মজিদ জানান, শুক্রবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয় মনিরুলকে। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই মনিরুলের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওই চিকিৎসক।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ আসাদুজ্জামান পলাশের সঙ্গে বারবার কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের জেলর মামুনুর রশিদ শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় মনিরুলকে শুক্রবার রাত ১০টার পর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকের হাতের উপর মনিরুল মারা গেছে।
সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারি সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক তন্ময় কুমার বসু জানান, মনিরুলের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। পাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে তার মৃত্যু হয়েছে।
এফএম/দীপ্ত সংবাদ