সাতক্ষীরায় কর্মরত পাঁচজন সাংবাদিকের নামে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস এর ব্যবস্থাপক জহুর আলী সরদার এর দায়ের করার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে। সাতক্ষীরায় কর্মরত সাংবাদিকদের একাংশ রবিবার ( ৩০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আলাউদ্দিন চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যাণার্জী, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, ডিবিসি টেলিভিশনের এম জিলুর রহমান, এখন টিভির আহসানুর রহমান রাজীব, মানবজমিনের ইয়ারব হোসেন, মোহনা টিভির আব্দুল জলিল, যমুনা টিভির আকরামুল ইসলাম, কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাস বাচ্চু, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি খায়রুল ইসলাম, উপকূলীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল হালিম, স্বদেশের পরিচালক মাধব দত্তসহ আরও অনেকে। বক্তারা অবিলম্বে সাংবাদিকদের নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এ দিকে সাতক্ষীরায় কর্মরত একাংশের সাংবাদিকদের অভিযোগ, আশাশুনি উপজেলার বসুখালি গ্রামের জামায়াতের সক্রিয় কর্মী প্রয়াত হামিদুল্লাহ গাজীর ছেলে গাজী ফরহাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি চাঁদাবাজ চক্র। জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতার পত্রিকায় কাজ করার সুবাদে সে কখনো র্যাব এর সোর্স আবার কখনো পুলিশের সোর্স পরিচয়ে চাঁদাবাজি অব্যহত রেখেছে মর্মে পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। দূর্ণীতিবাজ এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচাতে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে সে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকার ও সাতক্ষীরার একটি পত্রিকায়। এ ছাড়া কয়েকটি অনলাইনে সে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তালার শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস এর ব্যাবস্থাপকের কাছে ফরহাদ চাঁদা দাবি করেছিলো তার অডিও রেকডিং আছে উল্লেখ করে তারা বলেন, গত বুধবার শহরের শিমুল ক্লিনিক থেকে ইটাগাছার জনৈক পারভিনের ডাক্তারের পরিবর্তে মালিকের ব্যবস্থাপত্র লেখার কথা বলে মোঃ বিপুলের কাছ থেকে পারভিনকে ফিরিয়ে দেওয়ার নাম করে পাঁচ হাজার ও তার সহযোগীদের বরাদ দিয়ে আরো তিন হাজার টাকা মোট আট হাজার পাকা চাঁদাবাজি করেছে ফরহাদ। এ ছাড়া পুরাতন সাতক্ষীরার তানজিলা খাতুন তার কাছে চাঁদা দাবির ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী হয়েছে।
সাংবাদিকদের একাংশ ক্ষোভের সাথে বলেন, প্রেসক্লাবের ক্ষমতা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে অ্যাড. আবু কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা আবু আহম্মেদ, কল্যাণ ব্যাণার্জী, আব্দুল জলিল, আব্দুল বারীসহ কয়েকজন কয়েক বছর আগে প্রেসক্লাবে একাংশের সাংবাদিকদের হাতে মারপিটের শিকার হন। পরবর্তীতে কল্যাণ ব্যাণার্জী– মমতাজ আহমেদ বাপ্পি গ্রপের সঙ্গে আবুল কালাম– আবু আহম্মেদ গ্রপের দ্বন্ধ চরম আকার ধারণ করে। সাংবাদিকদের বিভাজনকে সামনে রেখে গত ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে শহরের পিএন হাইস্কুলের কাছ থেকে সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক তারেক ও উপপরিদর্শক লোকমান মটর সাইকেলে করে অপহরণ করে দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা আটক রেখে তা গোপন রাখলেও কল্যাণ ব্যাণার্জীর ডাকে সাড়া দিয়ে নিখোঁজ সাংবাদিকের পক্ষে স্টেটমেন্ট ও কর্মসুচি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন আবুল কালাম ও আবু আহম্মেদ নেতৃত্বাধীন সাংবাদিকরা। মাধব দত্ত নামের একজন মানবাধিকার কর্মী পুলিশের ভয়ে নিজ অফিসের বাথরুমে অবস্থা নেন। আবুল কালাম আজাদের খায়ের খাঁ বলে পরিচিত জিএম নুর ইসলাম ফতেপুর চাকদাহে সহিংসতার খলনায়ক হিসেবে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামী হওয়ায় ক্ষোভ মেটাতে রঘুনাথ খাঁর বিরুদ্ধে ইচ্ছামত লিখে রিমান্ড চেয়েছেন। রঘুনাথ খাঁ’র বিরুদ্ধে মিথ্যা নাশকতা ও চাঁদাবাজি মামলা দেওয়া হয়েছে।
চাঁদাবাজি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলার আসামী ইয়ারব হোসেন আগে ভাগে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন। যার ফলশ্রতিতে রঘুনাথ খাঁকে দেবহাটা থানা তেকে চোখ বেঁধে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে এসে ইলেকট্রিক শক ও শারীরিক নির্যাতন করতে সাহস পান পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জী লাঞ্ছিত হলেও সাংবাদিক সমাজের কোন উল্লেখযোগ্য প্রতিবাদ ছিল না। বরং অনেকে ভেবেছিল ভালই হয়েছে, ব্যাণার্জীর ভিত ধ্বসে পড়েছে। আর কখনো প্রেসক্লাব নিয়ে মাতব্বরি করতে যাবে না। তাতে টেরা বা বেলচা মাতব্বর হলেও সমস্যা নেই। অথচ গাজী ফরহাদের নেতৃত্বাধীন কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হতেই তাদেরকে বাঁচাতে কল্যান, কালাম, আবু আহম্মেদরা এক সুরে গান ধরেছেন। দিয়েছেন পত্রিকায় স্টেটমেন্ট। করেছেন মানববন্ধন। এতে চাঁদাবাজদের হাত শক্ত হবে। যদিও গাজী ফরহাদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে।
প্রসঙ্গত, তালা উপজেলা সদরের শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্ট এর বিএসটিএ রজিষ্ট্রেশন নেই মর্মে সাংবাদ প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করার অভিযোগে ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি সোহাগ হোসেন, ঢাকা মেইল ও ভোরের পাতার জেলা প্রতিনিধি গাজী ফারহাদ, দৈনিক পত্রদূতের সাংবাদিক হোসেন আলী, দৈনিক মুক্ত খবরের সাংবাদিক হাবিবুর রহমান ও দৈনিক কালের চিত্রের সাংবাদিক শাহীন বিশ্বাসের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে ২ এপ্রিল সাতক্ষীরার তালা আমলি আদালতে মামলা করেন শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির ব্যবস্থাপক জহর আলী সরদার। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আগামী ২৩ মের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
আল/দীপ্ত সংবাদ