শবে বরাত একটি মর্যাদাপূর্ণ রাত। হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়। একাধিক সহিহ হাদিসে এ রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। তাছাড়া এ রাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে রয়েছে বিশিষ্ট ইমামগণের নির্ভরযোগ্য বহু বক্তব্য। সহিহ বর্ণনা অনুযায়ী এ রাতে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ নাজিল হয়। একইসঙ্গে অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে দেন।
শবে বরাতের পরের দিন শাবান মাসের ১৫ তারিখ। এ দিন অনেকেই রোজা রাখেন। এ সম্পর্কে একটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন। প্রতি চান্দ্র মাসে তিন দিন রোজা রাখা সুন্নত। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন, সাহাবীদেরকেও মাসে তিন দিন রোজা রাখতে বলতেন। (তিরমিজি ৭৬০; ৭৬৩)
প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা সুন্নত। এ তিন দিন মাসের শুরুতেও হতে পারে, মাঝেও হতে পারে, আবার শেষেও হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু হাদিসে স্পষ্ট আছে যে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বিশেষভাবে মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ (যাকে আইয়ামে বীজ বলা হয়) রোজা রাখতে বলেছেন। (তিরমিজি ৭৬১)
হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেছেন, যে তিন দিনের কথা নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, সেই তিন দিন রোজা রাখাই সর্বোত্তম। (ফাতহুল বারী, ১৯৮১)
সে হিসেবে প্রতি মাসের আইয়ামে বীজে রোজা রাখা সুন্নত। শাবান মাসও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই শাবান মাসের আইয়ামে বীজে (১৩, ১৪, ১৫) রোজা রাখাও সুন্নত। ১৫ তারিখ আইয়ামে বীজের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে ১৫ তারিখ রোজা রাখাও সুন্নত।
বাকি থাকল একটি বর্ণনায় বিশেষভাবে ও পৃথকভাবে ১৫ শাবান রোজা রাখার কথা বর্ণিত হয়েছে। (ইবনে মাজাহ ১৩৮৪) কিন্তু বর্ণনাটি শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল। শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল হওয়ার কারণে কেবল এই বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে ১৫ শাবানের রোজাকে পৃথকভাবে সুন্নত কিংবা মুস্তাহাব মনে করা সঠিক নয় বলে মতামত দিয়েছেন মুহাক্কিক আলেমগণ।
তবে, যেমনটি পূর্বে বলা হল, ১৫ তারিখ আইয়ামে বীজের অন্তর্ভুক্ত— এ হিসেবে এই দিনের রোজাকে (১৩ ও ১৪ তারিখের রোজাসহ) নিঃসন্দেহে সুন্নত মনে করা যাবে।
মোটকথা, সর্বাবস্থায় শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা রাখা যাবে। পূর্বের দুই দিন তথা ১৩ ও ১৪ তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে একসঙ্গে তিন দিন রোজা রাখা যেমন যাবে, তেমনি পৃথকভাবে কেবল ১৫ তারিখও রোজা রাখা যাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তিন দিন রাখাই উত্তম।
এমনিভাবে ১৫ তারিখ আইয়ামে বীজের একটি দিন হিসেবে ১৫ তারিখের রোজাকে সুন্নতও মনে করা যাবে। কিন্তু পৃথকভাবে শাবান মাসের ১৫ তারিখ বিশেষ একটি দিন, সে হিসেবে পৃথকভাবে এ দিনে রোজা রাখা সুন্নত— এমন ধারণা রাখা যাবে না।
আল