বিজ্ঞাপন
বুধবার, জুলাই ২৩, ২০২৫
বুধবার, জুলাই ২৩, ২০২৫

মাইলস্টোন ট্রাজেডি: চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না ফাতেমার

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

মাত্র নয় বছর বয়সে থেমে গেল ফাতেমা আক্তারের হাসি। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় ঝলসে গেল তার স্বপ্ন। শেষ হয়ে গেলো বাবামায়ের স্বপ্ন। বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার। মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলেন।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কুনিয়া গ্রামে ফাতেমার বাড়ির আঙিনা জুড়ে শুধুই কান্নার রোল। মেয়েকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা রুপা বেগম। বাবা বনি আমিন নির্বাক চোখে শুধু চেয়ে রয়েছেন মেয়ের কবরের দিকে। অঝোরে কেঁদেই চলেছেন তিনি। বনি আমিন কুয়েত প্রবাসী। মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পেরে শনিবার রাতে ছুটে এসেছেন দেশে। কিন্তু মিললো শুধু মেয়ের নিথর দেহ। ফাতেমার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল, পুড়ে গিয়েছিলো তার মুখমণ্ডলও।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টায় কুনিয়া গ্রামের কাওমি মাদ্রাসা কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে শিশু ফাতেমাকে। এমন পরিস্থিতিতে চিতলমারীর কুনিয়া গ্রামবাসীর এখন একটাই প্রশ্ন, আবাসিক এলাকার ওপর দিয়ে বিমান চলাচল কতটা নিরাপদ?

ফাতেমার বাবা বনি আমিন শেখ বলেন, পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে আমি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে প্রবাসে আছি। শুধু মাত্র ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেছি। মেয়েটাকে ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম, যাতে মানুষের মতো মানুষ হতে পারে, বড় হয়ে ডাক্তার হতে পারে, মানুষের সেবা করতে পারে। কিন্তু আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমার নিষ্পাপ সন্তানের মুখের দিকে তাকাতে পারিনি। ওর মুখটা আগুনে ঝলসে গেছে। বাবা হয়ে এ দৃশ্য আমি কীভাবে মেনে নেব?

কুনিয়া কাওমি মাদ্রাসার শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ফাতেমার মাবাবার দিকে তাকাতে পারছি না। আর কত মায়ের বুক এভাবে খালি হবে? আমরা কি আমাদের সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ দেশ, একটি নিরাপদ আকাশ দিতে পারবো না? একটি আবাসিক এলাকার ওপর দিয়ে বিমান চলাচল কতটা নিরাপদ সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন।

ফাতেমার চাচাতো ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, সকালেই ফাতেমার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আমি জানাজা পড়িয়েছি, বারবার আগুনে ঝলসে যাওয়া ওর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। কী যে কষ্ট হচ্ছিল ভাষায় বোঝাতে পারব না। আমাদের সন্তানরা কি এভাবেই মারা যাবে? আবাসিক এলাকার ওপর দিয়ে বিমান চলাচলের বিষয়ে সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নেবে না?

ফাতেমার ফুফু ইয়াসমিন আক্তার বলেন, আমার ভাইজি ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। কালকে দুর্ঘটনার পর আমরা ওকে প্রথমে খুঁজে পাচ্ছিলাম না, পরবর্তীতে আমরা ঢাকার সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সাড়ে সাতটার দিকে পাওয়া যায়। ওর ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল যে ডাক্তার হবে, আমাদের সবার স্বপ্ন ছিল যে ফাতেমাকে ডাক্তার বানাবো। কিন্তু সেই আর স্বপ্ন পূরণ হলো না। ছোটবেলা থেকেই শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে ছিল। আমাদের সবার চোখের মণি। ফাতেমা সবার বড়, ওর ছোট দুটো ভাই আছে। ও ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ভালো ছিল।

মামুন আহমেদ/বাগেরহাট

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More