বিজ্ঞাপন
বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪

বাংলাদেশ-ভারত: একসময়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখন তিক্ততায় ভরা

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

একসময়ের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উত্তেজনা চলছে। বাংলাদেশে একজন হিন্দু পুরোহিতকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তারের জেরে এই দুই প্রতিবেশী দেশের পরস্পরের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ করার পর এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে।

সাবেক ইসকন নেতা ও সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে দুই দেশকে অভিযোগপাল্টা অভিযোগ করতে দেখা গেছে।

চলতি বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। হাসিনার ভারতে অবস্থান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং নরেন্দ্র মোদি সরকারের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন ৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, হাসিনা ভারতে বসে ক্ষমতায় ফিরে আসার ষড়যন্ত্র করছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা দাবি করেছেন, ভারত রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করছে।

বাংলাদেশভারত সাম্প্রতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হিন্দু পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের ঘটনা। ১৭ কোটি মানুষের মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ১০ শতাংশেরও কম।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আগে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বা হরে কৃষ্ণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। চট্টগ্রামের একটি আদালত তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, এক সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করে তার ওপরে একটি গেরুয়া পতাকা উড়িয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় একজন রাজনীতিবিদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা করা হয়।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থকরা আদালত ঘেরাও করলে পরিস্থিতি সহিংস হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালেও একজন মুসলিম আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এর জেরে হিন্দু পল্লীগুলোতে হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার জন্য কারা দায়ী, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সহিংসতার অভিযোগে পুলিশ ইতোমধ্যে ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীর আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পর আইনি জটিলতায় জড়ানো দুর্ভাগ্যজনক। তারা আরও বলেছে, এদিকে হিন্দু দেবতা ও মন্দির অপবিত্র করা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় জড়িত উগ্রবাদীরা এখনও মুক্ত রয়েছে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে সীমান্ত অবরোধের হুমকি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সমর্থকরা।

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্বেষ ও নিপীড়নের শিকার। ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা ও ইসলামি উগ্রবাদের উত্থানের ফলে সেখানে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ একটি পুলিশি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে তার সরকার ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করেছিল। যদিও তিনি কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন, তার শাসনামলেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তারা সব নাগরিকের জন্য সমান সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, নয়াদিল্লি তাদের পছন্দের নেতা শেখ হাসিনার পতনের ঘটনাকে হালকা করার জন্য বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের দুর্দশাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ভারতের পক্ষ থেকে অতিরঞ্জিত ও ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনেছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনায় শত শত লোক নিহত হয়েছেবলে দাবি করা হয় ভারতের ডানপন্থি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোতে। তবে বাংলাদেশের হিন্দু নেতারা জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীদের মধ্যে তাদের সম্প্রদায়ের সদস্য খুবই কম ছিলেন।

গত সপ্তাহে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস স্বীকার করেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন টানাপোড়েনে রয়েছে। তিনি শেখ হাসিনাকে ভারতের সুরক্ষা দেওয়া এবং ভারত থেকে ছড়ানো অপপ্রচারকেই এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

তার মতে, ভারতের এই প্রচারণায় বাংলাদেশের সরকার চরমপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

. ইউনূস বলেন, “শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং সেখানে থেকে মন্তব্য করে চলেছেন, যা বাংলাদেশের জন্য অস্থিরতা তৈরি করছে।

তিনি ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত একজন ব্যক্তিকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া ঠিক হচ্ছে না এবং তাকে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

আল

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More